কিডনিতে পাথর: লক্ষণ থেকে প্রতিকার পর্যন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ


আমাদের শরীরের অন্যতম অংশ কিডনি। আর কিডনির প্রধান কাজ হল রক্ত পরিশোধন করা এবং শরীরের বর্জ্য ও অতিরিক্ত জল অপসারণ করা। এছাড়াও, কিডনি শরীরের লবণ, খনিজ এবং অ্যাসিডের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে অনেকেই কিডনির সমস্যায় ভোগের যার মধ্যে অন্যতম কিডনিতে পাথর হওয়া।
কিডনিতে পাথর যেকোনো বয়সেই হতে পারে, তবে পুরুষদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। অনেক সময় ছোট পাথর নিজের থেকেই মূত্রের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, আবার বড় পাথর চিকিৎসার প্রয়োজন তৈরি করে। চিকিৎসকরা কিডনির পাথর হওয়ার পেছনেরর, এর লক্ষণ, এবং প্রতিরোধের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
কিডনিতে পাথর কী: কিডনিতে পাথর হলো খনিজ, লবণ ও অন্যান্য উপাদান দিয়ে গঠিত কঠিন স্ফটিক। মূত্রতন্ত্রে থাকা অতিরিক্ত উপাদান যখন তরলের চেয়ে বেশি ঘন হয়ে যায়, তখন এই পাথর তৈরি হয়। এটি কখনো বালুর দানার মতো ছোট হয়, আবার কখনো গলফ বলের মতো বড়ও হতে পারে।
কিডনিতে পাথরের লক্ষণ: সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো—
- কোমর, পেট বা পাশের দিকে তীব্র ব্যথা
- প্রস্রাবে জ্বালা বা রক্ত
- প্রস্রাবে দুর্গন্ধ বা ঘোলা রং
- বমি বমি ভাব ও বমি
- জ্বর বা ঠান্ডা লাগা
- বারবার প্রস্রাবের চাপ
- প্রস্রাব আটকে যাওয়া
ছোট পাথর অনেক সময় কোনো উপসর্গ ছাড়াই বেরিয়ে যেতে পারে।
যেসব কারণে কিডনিতে পাথর হয়: চিকিৎসকদের মতে মূত্রে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, অক্সালেট, ইউরিক অ্যাসিড বা সোডিয়াম থাকলে পাথর তৈরি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। নিচের কারণগুলোও উল্লেখযোগ্য:
- কম পানি পান করা
- অতিরিক্ত প্রোটিন, নুন ও চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া
- পরিবারের ইতিহাসে কিডনিতে পাথরের রেকর্ড
- পেটের সার্জারি বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ব্লক
- কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- স্থূলতা, হাই ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিস
পাথরের ধরন:
- ক্যালসিয়াম অক্সালেট/ফসফেট পাথর – সবচেয়ে সাধারণ
- ইউরিক অ্যাসিড পাথর – মাংসজাত খাবার খেলে হতে পারে
- স্ট্রুভাইট পাথর – ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ থেকে হয়
- সিস্টিন পাথর – জেনেটিক কারণে হয়
চিকিৎসা: কিডনির পাথরের চিকিৎসা নির্ভর করে কত বড় পাথর হয়েছে তার ওপর। চিকিৎসকরা বলছেন, ছোট পাথর হলে সাধারণত ওষুধ ও পানি পানের মাধ্যমে বেরিয়ে যায়। তবে বড় পাথরের জন্য নিচের চিকিৎসাগুলো প্রয়োগ হয়:
- শকওয়েভ লিথোট্রিপসি: শরীরের বাইরে থেকে তরঙ্গ দিয়ে পাথর ভেঙে দেয়া হয়
- ইউরেটারোস্কোপি: ক্যামেরাযুক্ত টিউব ঢুকিয়ে পাথর অপসারণ
- পারকিউটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটোমি: পিঠে ছোট ছিদ্র করে কিডনি থেকে পাথর তোলা
- ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি: বড় পাথরের ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য
কিডনি পাথর প্রতিরোধে যা করবেন:
- দিনে কমপক্ষে ২-৩ লিটার পানি পান করুন
- বেশি প্রোটিন, লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলুন
- পালংশাক, চিনাবাদাম, গমের ভুষি কম খান (অক্সালেট সমৃদ্ধ)
- সঠিক ওজন বজায় রাখুন
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম গ্রহণ করুন
- বারবার হলে ডায়েট ও ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করুন
কিডনিতে পাথর হলে দুশ্চিন্তা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সময়মতো চিকিৎসা ও জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে এই যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রতিরোধই সেরা চিকিৎসা তাই সচেতন থাকুন।
দৈএনকে/জে, আ
