বাগেরহাটে বিএনপি নেতা দিপুর বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্ক ও সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ


বাগেরহাট জেলা বিএনপির এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামান দিপু একাধিক অনৈতিক ও দুর্নীতির অভিযোগের মুখে পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন দলীয় তৃণমূল কর্মীরা, যা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসনে বিএনপির অবস্থানকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।
অনৈতিক সম্পর্ক ও ক্ষমতার অপব্যবহার
স্থানীয়দের দাবি, মোল্লাহাট উপজেলার সরশপুর এলাকার এক শিক্ষিকার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত অনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন দিপু। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি বাগেরহাট জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ছিলেন। তখন এ সম্পর্ক নিয়ে জেলা শিক্ষা দপ্তরে অভিযোগ গড়ায় এবং বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট তোলপাড় হয়।
দলীয় সম্পদ ব্যবহারে অনিয়ম
দিপুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে দলীয় সম্পদের অপব্যবহার ও অর্থ আত্মসাৎ। দলের নামে স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা নিলেও গত ১৭ বছর ধরে তিনি কোনো রাজনৈতিক বা আইনি সহায়তায় অংশ নেননি বলে অভিযোগ। তৃণমূল নেতাদের ভাষ্য, তিনি হঠাৎ করেই নির্বাচনী তৎপরতা বাড়িয়ে আবারো নেতৃত্বে আসার চেষ্টা করছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, দিপুর ছেলে ফাইজালের মাধ্যমে তিনি সম্প্রতি বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে একটি বিলাসবহুল গাড়ি উপহার দিয়েছেন, যার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলীয় অনেকেই।
রহস্যময় আর্থিক উৎস
ছেলে ফাইজালের জীবনযাত্রা ঘিরেও তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। কোনো ব্যবসা বা আয়সূত্র না থাকলেও তিনি দামি গাড়ি, ব্র্যান্ডেড পোশাক ও প্রযুক্তি পণ্যে অভ্যস্ত। জানা গেছে, ফাইজাল ‘জেড.সি.এফ’ নামের একটি অখ্যাত সংগঠনের ব্যানারে পদবাণিজ্য ও বিদেশি অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন, যেটি বৈধ নয় বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
আসন হারানোর শঙ্কা
বিএনপির একাধিক তৃণমূল নেতা অভিযোগ করেছেন, দিপু তার অতীত রাজনৈতিক অবস্থানকে ব্যবহার করে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। তার বিরুদ্ধে বহু আগের ঘেরের মাটি খননের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আজও রয়ে গেছে। এমন অবস্থায় এই নেতার কার্যক্রমে বাগেরহাট-১ আসনে বিএনপির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে।
তদন্ত ও জবাবদিহির দাবি
দলীয় সূত্র জানায়, এসব অভিযোগ কেন্দ্র করে দিপুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্ত দাবি তুলেছেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
ওয়াহিদুজ্জামান দিপু প্রথমে জাসদ ছাত্রলীগে রাজনীতি শুরু করেন। পরে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন হয়ে জাতীয় পার্টিতে সংযুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন।
দলীয় নেতা-কর্মীদের মতে, ওয়াহিদুজ্জামান দিপু ও তার পুত্র ফাইজালের কার্যক্রমের সঠিক তদন্ত এবং দলীয় ব্যবস্থা না নিলে বাগেরহাটে বিএনপির অবস্থান আরও দুর্বল হতে পারে। তারা বলছেন, “বিএনপি বাঁচাতে হলে দিপুর মতো ‘ব্যবসায়ী রাজনীতিকদের’ চিহ্নিত করে সরে দাঁড় করাতে হবে।”
