ঘুরে দেখেছেন ভাসু বিহার? বগুড়ার প্রাচীন এক বিস্ময়


বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ইউনিয়নের ভাসু বিহার গ্রামে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ভাসু বিহার। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘নরপতির ধাপ’ নামে বেশি পরিচিত। ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ব ও সংস্কৃতির এক অনন্য মিলনস্থল এই বিহারটি ৮ম শতকে নির্মিত হয় বলে ধারণা করা হয়। ১৯৭৩-৭৪ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই স্থানটিতে খনন কার্যক্রম চালায়।
তখনই প্রথম এর নিচে লুকিয়ে থাকা একটি বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। অনেক গবেষক মনে করেন, এটি ছিল একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ। যেখানে ভিক্ষুরা ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতেন। খ্রিষ্টীয় ৬৩৮ সালে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ বগুড়া সফরে এসে এই স্থানের উল্লেখ করেছিলেন ‘পো-শি-পো’ বা ‘বিশ্ববিহার’ নামে।
খননে মিলেছে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের খননে ২টি মাঝারি আকৃতির সংঘারাম এবং ১টি মন্দিরসহ প্রায় ৮০০টি প্রত্নবস্তু আবিষ্কৃত হয়। ছোট সংঘারামটির আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৪৬ মিটার। এতে রয়েছে ২৬টি কক্ষ ও বারান্দা। বড় বিহারটির আয়তন পূর্ব-পশ্চিমে ৫৬ মিটার ও উত্তর-দক্ষিণে ৪৯ মিটার এবং এতে রয়েছে ৩০টি ভিক্ষু কক্ষ।
অদূরে অবস্থিত উত্তরমুখী মন্দিরটির আয়তন ১০২৬ বর্গমিটার। এর মাঝখানে রয়েছে একটি বর্গাকার মণ্ডপ ও চারপাশে ধাপে ধাপে প্রদক্ষিণ পথ।
খননকালে পাওয়া নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে ব্রোঞ্জের ক্ষুদ্র বুদ্ধমূর্তি, পোড়ামাটির ফলক ও সীল, অলংকৃত ইট, লোহার পেরেক, মাটির প্রদীপ, পাথরের গুটিকা, এবং মৃৎপাত্রের টুকরো। এগুলো থেকে ১০ম-১১শ শতকের পাল শাসনামলের শিল্প ও জীবনের স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যায়।
ইতিহাসের ছায়ায় গ্রাম্য শান্তি
ভাসু বিহার প্রত্নস্থলে প্রবেশের মুখে একটি বড় বটগাছ দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায়। পাশেই রয়েছে একটি তথ্য বোর্ড, যেখানে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সংক্ষেপে ভাসু বিহারের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ধাপে ধাপে খননকৃত অংশ সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত। গাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে খেজুর গাছ। জায়গাটি একান্ত নিরিবিলি, দর্শনার্থীর ভিড় খুব একটা নেই। আবিষ্কারের পর থেকে এই প্রত্নস্থলে একাধিকবার সংস্কার কাজ হয়েছে।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে গাবতলী, মহাখালী, কল্যাণপুর ও শ্যামলী থেকে বগুড়ার উদ্দেশ্যে নিয়মিত বাস ছেড়ে যায়। এছাড়া রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে করেও বগুড়া যাওয়া যায়। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি রিজার্ভ নিয়ে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরের শিবগঞ্জ উপজেলার ভাসু বিহারে যাওয়া যায়। ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা হতে পারে, তবে যাওয়ার আগে দরদাম করে নেওয়াই ভালো।
ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা
বিশেষ একটি তথ্য—এখানকার বাজারে কলা বিক্রি হয় ওজনে, ডজনে নয়। স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসে সমৃদ্ধ ভাসু বিহার তাই শুধু প্রাচীন নিদর্শন নয়, একান্তভাবে বাঙালির ঐতিহ্য ও কৌতূহলের কেন্দ্রস্থলও বটে।
দৈএনকে/জে, আ
