এসএসসি ফলাফলে গণিতের ছেঁদো হিসাব: মুখস্থনির্ভর শিক্ষার ধাক্কা


এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফলাফলে দেখা দিয়েছে মারাত্মক বিপর্যয়। ২০২৪ সালের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে প্রায় ১৪.৫৯ শতাংশ। ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশিরভাগ বোর্ডেই গণিতে ভয়াবহ ব্যর্থতা এই অবনমনের মূল কারণ। যেখানে শিক্ষার্থীরা গণিতে তুলনামূলক ভালো করেছে, সেই বোর্ডগুলোর গড় পাসের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।
১১টি শিক্ষা বোর্ডে এবার গড় পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে কম পাসের হার বরিশাল বোর্ডে—মাত্র ৫৬.৩৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে ফেল করেছে প্রায় ৪৪ জন। শুধু গণিতেই এ বোর্ডে ফেল করেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী (পাসের হার ৬৪.৬২ শতাংশ)। ময়মনসিংহ বোর্ডেও একই দৃশ্যপট। সেখানে গড় পাসের হার ৫৮.২২ শতাংশ এবং গণিতে পাসের হার ৬৪.২৭ শতাংশ।
ঢাকা, কুমিল্লা, দিনাজপুর ও মাদরাসা বোর্ডেও গণিতে পাসের হার ৭০ শতাংশের আশেপাশে। ফলে এ বোর্ডগুলোতেও পাসের হার আশানুরূপ হয়নি। ঢাকায় ৭৫.১৪%, কুমিল্লায় ৭২.০১%, দিনাজপুরে ৭১.৩৫% এবং মাদরাসা বোর্ডে ৭৯.৭৩% শিক্ষার্থী গণিতে পাস করেছে।
অন্যদিকে যেসব বোর্ডে গণিতে ভালো ফলাফল হয়েছে, সেখানে পাসের হারও তুলনামূলক বেশি। রাজশাহী বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৮৬.৫২%, যশোরে ৮৫% এবং কারিগরি বোর্ডে সবচেয়ে বেশি—৮৮.৭২%। চট্টগ্রামে ৮১.৫৩% এবং সিলেটে ৮৩.১৭% শিক্ষার্থী গণিতে পাস করেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইংরেজি ও আইসিটিতে এবার তুলনামূলক ভালো করলেও গণিত ছিল সবচেয়ে দুর্বল অংশ। অনেকেই গণিতে ফেল করেছে, আবার অনেকে পাস করেও কম নম্বর পাওয়ায় জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গণিতভীতি এখনও শিক্ষার্থীদের গ্রাস করে রেখেছে। এর জন্য দায়ী মুখস্থনির্ভর শিক্ষা ও নির্দেশনাবিহীন প্রস্তুতি। শিক্ষকরা অনেক সময় ‘পাস করিয়ে দেওয়ার সাজেশন’ দেন, ফলে শিক্ষার্থীরা ধারণাভিত্তিক সমাধানে পারদর্শী হয়ে ওঠে না। পরীক্ষায় সামান্য ভিন্নতা এলেই তারা উত্তর মিলাতে পারে না।’
এই বিপর্যয় কাটাতে শিক্ষাবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন, স্কুলপর্যায়ে মৌলিক গণিত চর্চা বাড়ানো, সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেওয়া এবং মুখস্থ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য পাঠক্রম ও শিক্ষক প্রশিক্ষণে আমূল সংস্কার জরুরি। শুধু পরীক্ষা নয়, গণিত যেন শিক্ষার্থীদের জন্য 'বোঝা' না হয়ে, হয়ে ওঠে বোঝার একটি আনন্দময় উপায়—সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করা দরকার এখনই।
