মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • ঢাকাসহ জনবহুল এলাকায় ত্রুটিপূর্ণ বিমান উড্ডয়নে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে নরেন্দ্র মোদির শোকবার্তা ও সহায়তার ইচ্ছা মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: সুশাসনের করুণ পরাজয় নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জনই শিশু: ডা. সায়েদুর আইন ও শিক্ষা উপদেষ্টা মাইলস্টোনে অবরুদ্ধ, সাথে আছেন প্রেস সচিবও ছয় দফা দাবিতে রাস্তায় মাইলস্টোনের শোকাহত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে পালিত হচ্ছে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক সিরিজ জয়ের হাতছানি, ইতিহাসের পথে বাংলাদেশ মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: ইয়ুথ জার্নালিস্ট কমিউনিটির গভীর শোক প্রকাশ মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত: নিহত বেড়ে ২৭, শোকাহত জাতি
  • আজ মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ১০১তম জন্মবার্ষিকী

    আজ মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ১০১তম জন্মবার্ষিকী
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    মশিউর রহমান যিনি জাদু মিয়া নামে পরিচিত,বাংলাদেশের সাবেক সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন। তিনি জিয়াউর রহমানের সরকারের সময় ( প্রধানমন্ত্রীর) মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন।ন্যাপের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সিনিয়র মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার ১০১তম জন্মবার্ষিকী আজ বুধবার । ১৯২৪ সালের ৯ জুলাই নীলফামারী জেলার ডিমলার খগাখড়িবাড়ি গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা ওসমান গণি ও মা আলহাজ্ব আবিউন নেছা, তৎকালীন সমাজে অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

    ছাত্র জীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সেই সময়ই তিনি বার্মা গমন ও যুদ্ধাহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। ৪০ দশকের দুর্ভিক্ষের সময় রংপুরের চরাঞ্চলে যখন প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তখন জীবনের মায়া ত্যাগ করে তিনি জনগনের সেবায় আত্মনিয়োগ করেন। তার সেবার স্বীকৃতি স্বরূপই তার নামানুসারে একটি চরের নাম করন করা হয় ‘যাদুর চর’

    ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় সহিংসতার বিরুদ্ধে ও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির লক্ষ্যে হত্যাযজ্ঞের বিভৎসতার ছবি তুলে যাদু মিয়া একটি বিশেষ বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন। ফলে ব্রিটিশ সরকার তাকে গ্রেফতার করে। দিল্লিতে তার বিচার অনুষ্ঠিত হয়। তার যুক্তির কাছে সরকার পরাজিত হয়ে বিশেষ স্কোয়াড দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেয়। তার প্রচেষ্টায়ই সেই অঞ্চলে দাঙ্গা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

    ৪০-এর শেষের দিকে তিনি ইয়াং ম্যান এসোসিয়েশন অব পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান ছিলেন।রংপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অনারারী সেক্রেটারী ও ১৯৫৪- ৫৮ পর্যন্ত রংপুর জেলা কনজুমারস কো-অপারেটিভ সোসাইটি‘র বৃহত্তর রংপুরের নির্বাচিত সেক্রেটারী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ৫০-দশকের শেষ দিকে রংপুর জেলা বোর্ডের কনিষ্ঠতম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান যুব লীগের উদ্দ্যেগে অনুষ্ঠিত যুব উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
    ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের একজন সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন এবং পরিষদের বিরোধী দলের ডেপুটি লিডার মনোনীত হন। এমএনএ ও ডেপুটি লিডার থাকাকালে ১৯৬৩ সালে আইয়ুব সরকারের আমলে পাকিস্তান সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৬৫ সালে তিনি পুনরায় এমএনএ নির্বাচিত হন। তবে ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী গণ আন্দোলনের সময় মাওলানা ভাসানীর আহবানে তিনি পদত্যাগ করেন।১৯৬৬ সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর আহ্বানে গণআন্দোলনের যে সূচনা হয়েছিল সেখানেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ৬০-এর দশকের শেষের দিকে মশিউর রহমান যাদু মিয়া ন্যাপ-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
    ১৯৬৯ সালে টোবাটেকসিং এ কৃষক সম্মেলনে ইয়াহিয়া খানকে গাদ্দার বলার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং প্রহসন মূলক বিচারের মাধ্যমে সাত বছর সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়।

    যাদু মিয়া ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ পল্টন ময়দানে মওলানা ভাসানীর আহ্বানে অনুষ্ঠিত জনসভায় ন্যাপের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ এবং প্রতীকী পতাকা উত্তোলন করেন। 

    ১৯৭৩ সালের ১৪ মে এক গণসমাবেশে ভাসানী বলে, “অতি শিগগিরই আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হবে,কারনটা ভাসানী বলেছিল, ‘মুজিব বেঈমান, মীরজাফর, তাঁকে উৎখাত করতে হবে’।মাওলানা ভাসানীর (১৯৭৬) এ তার মৃত্যুর পর বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি হন।স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাকে গ্রেফতার করে এবং তখন তিনি তিন বছর দুই মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। ১৯৭৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে তদানিন্তন সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু, মাত্র তিন মাসের মাথায় ১৯৭৪ সালের জুন মাসে আবারো তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৭৫ সালে নভেম্বর মাসে তিনি কারা মুক্ত হন।১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠন করলে ন্যাপ মোজ্জাফর ন্যাপ বিলুপ্ত করে বাকশালে যোগ দেন। আর মওলানা ভাসানি ও যাদু মিয়ার নেতৃত্বে বাকশালের তীব্র বিরোধিতা করেমোজাফফর আহমেদের ন্যাপের আরেকটি অংশের প্রতীক ছিল কুঁড়েঘর।
    ভাসানী ন্যাপ কিছু বিষয়ে সরকারের বিরোধিতা করেছিল। এর মধ্যে একটি ছিল বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তি, যার বিরোধিতা করেন মাওলানা ভাসানী। সেই জের ধরে মুজিব সরকার কর্তৃক ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর নিবন্ধন বাতিল করে।

    ১৯৭৬ সালে ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারতের অব্যাহত পানি আগ্রাসনের প্রতিবাদে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চের প্রস্তুতি ও সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

    তিনি ১৯৭৭ সালে প্রগতিশীল-দেশপ্রেমিক-গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সমন্বয়ে প্রথমে জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ও পরবর্তীকালে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে ন্যাপের কার্যক্রম স্থগিত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

    ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৭৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন।

    রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে ভাষানী ন্যাপের দলীয় প্রতীক ধানের শীষ তুলে দেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। যাদু মিয়া এ দলের আহবায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সেই সময়টিতেই তিনি জিয়াউর রহমানের অনুরোধে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদায় সিনিয়র মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

    ১৯৭৯ সালে ৯ই মার্চ বিকেলে সেরিব্রিয়াল হেমারেজ আক্রান্ত অবস্থায় মসিউর রহমানকে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার চিকিৎসার জন্য সরকার পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিউরোসার্জন ডাক্তার জুমা, নিউরোলজিস্ট ডাক্তার ভাট্টি ও ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নিউরোসার্জন ডাক্তার ট্যান্ডন ও ডাক্তার এসপি ভট্টাচার্যকে ঢাকা আনান। কিন্তু সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়।

    গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সিনিয়র মন্ত্রী ( প্রধানমন্ত্রী) মশিউর রহমান ১২ ই মার্চ রাত ১১:৫৭ মিনিটে পিজি হাসপাতালের প্রাণ ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।জনাব রহমানের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান প্রেসিডেন্ট জিয়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুস সাত্তার, মন্ত্রী এস, এ বারী এটি, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী আব্দুর রহমান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এবং হাবিবুল্লাহ খান। শাহ আজিজুর রহমান মৃত্যুকালে তাঁর শয্যা পার্শেই ছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মন্ত্রী পরিষদের সকল সদস্য হাজির হন হাসপাতালে। নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম এস খানসহ সামরিক ও বেসামরিক উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ ও হাজির হন হাসপাতালে।

    প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী, বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী, অকুতোভয় অন্তর্ভেদী দৃষ্টি, দৃঢ় ইচ্ছা শক্তি ও প্রচন্ড আকর্ষনীয় ক্ষমতার অধিকারী এই সিংহ পুরুষটির জীবনে পাওয়ার চেয়ে ত্যাগই করেছেন বেশী। আমাদের দেশে কীর্তিমানদের মূল্যায়ন খুব একটা করতে দেখা যায় না। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমরা সীমাহীন সীমাবদ্ধতার শিকার। আমরা রাজনৈতিক আদর্শগত দ্বন্দ-সংঘাতের চেয়ে ব্যক্তিগত এবং দলীয় কোন্দলে বেশী জড়িয়ে পড়ি।

    আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৪৭থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সকল আন্দোলন সংগ্রামেও আমাদের মাঝে নানা বিভেদ পরিলক্ষিত। এ বিভেদ ছিলো মত ও পথের। এত সব মতপার্থক্যের মাঝে দেশ এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের যে ক'জন ক্ষনজন্মা রাজনীতিক ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন তাঁদের মধ্যে একজন হচ্ছেন মশিউর রহমান যাদু মিয়া।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ

    আরও পড়ুন  

    A PHP Error was encountered

    Severity: Core Warning

    Message: PHP Startup: Unable to load dynamic library 'tidy.so' (tried: /opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so (libtidy.so.5: cannot open shared object file: No such file or directory), /opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so.so (/opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so.so: cannot open shared object file: No such file or directory))

    Filename: Unknown

    Line Number: 0

    Backtrace: