ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথা: কী বোঝায় এই সংকেত?


ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথা সাধারণত তখনই হয় যখন শরীরের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়। মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে গ্লুকোজের ওপর নির্ভরশীল, তাই গ্লুকোজের অভাবে মাথায় ব্যথা শুরু হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত চাপ, ঘুমের অভাব বা ডিহাইড্রেশনের কারণেও ক্ষুধার সঙ্গে মাথাব্যথা হতে পারে। নিয়মিত ও সময়মতো খাবার না খাওয়ার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সমস্যা হয়। এই অবস্থায় সহজেই মাথাব্যথা অনুভূত হয় যা কাজকর্মের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথা এড়াতে নিয়মিত খাবার খাওয়া এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। দ্রুত প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেলে এই ধরনের মাথাব্যথা কমে আসে। এমনকি পানি খাওয়ার পরিমাণ বাড়ানোও সাহায্য করতে পারে। যদি মাথাব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হাঙ্গার হেডেক: হাঙ্গার হেডেক হলো এমন এক ধরনের মাথাব্যথা, যা ক্ষুধার কারণে হয়। যখন খাবারের মধ্যে দীর্ঘ বিরতি থাকে বা পর্যাপ্ত ক্যালরি পাওয়া যায় না, তখন রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়। মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত শক্তি না পেলে স্নায়ু ও পেশিতে চাপ সৃষ্টি হয়, যা মাথাব্যথার রূপ নেয়।
কেন হয় এই মাথাব্যথা: ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথার পেছনে রয়েছে কয়েকটি শারীরবৃত্তীয় কারণ—
- লো ব্লাড সুগার: খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না পাওয়া মস্তিষ্কের জন্য শক্তির ঘাটতি তৈরি করে।
- পেশির টান: শরীরে হিস্টামিন নিঃসৃত হয়ে পেশিতে টান সৃষ্টি করে।
- স্ট্রেস হরমোন বৃদ্ধি: রক্তে শর্করা কমে গেলে শরীর কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিনের মতো স্ট্রেস হরমোন ছাড়ে, যা মাথাব্যথা বাড়াতে পারে।
ডিহাইড্রেশন, অতিরিক্ত বা কম ক্যাফেইন গ্রহণ, অনিয়মিত খাবার সময়সূচি, নিদ্রাহীনতা ও ডায়েটিংও এ সমস্যার কারণ হতে পারে।
লক্ষণ: হাঙ্গার হেডেক সাধারণত কপাল বা মাথার সামনের অংশে ব্যথা সৃষ্টি করে, যা দুই দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। সাথে থাকতে পারে—
- হালকা বমি ভাব
- ঘাড় ও কাঁধে পেশির টান
- মাথা ঘোরা
- ক্লান্তি
- পেট ব্যথা
- অতিরিক্ত ঘাম
চিকিৎসা: সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হলো খাওয়া। সুষম খাবার যেমন শাকসবজি, ফল, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ আহার নেওয়া উচিত। সময় কম থাকলে বাদাম, ফল, দই বা হোল-গ্রেইন বিস্কুটের মতো স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসও কাজে দেবে। পর্যাপ্ত পানি পান করাও জরুরি।
সাধারণত খাবার খাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে এই মাথাব্যথা কমে যায়। তবে না কমলে সাধারণ পেইন রিলিভার ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিরোধ
- দিনভর পর্যাপ্ত পানি পান
- নিয়মিত বিরতিতে ছোট ছোট খাবার খাওয়া
- যথেষ্ট ঘুম
- ডায়েট প্ল্যান করলে হঠাৎ ক্যালরি কমিয়ে না আনা
- রোজা থাকলে সেহেরীতে পর্যাপ্ত পানি ও জটিল শর্করা যেমন আলু, ডাল, হোল-গ্রেইন খাওয়া
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন: ক্ষুধার কারণে মাথা ব্যথা হলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। অনেক সময় এটা বড় কোনও রোগের ইঙ্গিত দেয়। তাই কিছু লক্ষণ দেখা দিলেই সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। যদি ক্ষুধাজনিত মাথাব্যথা—
- নিয়মিত মাথা ব্যথা
- ওষুধেও না কমলে
- দৈনন্দিন কাজে বাধা
এসব লক্ষণ দেখে দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। তাছাড়া হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, সাথে বিভ্রান্তি, কথা জড়ানো, মাথা ঘোরা বা দৃষ্টি ঝাপসা হলে তা স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে এক্ষেত্রে দ্রুত জরুরি চিকিৎসা নিন।
হাঙ্গার হেডেক আপনার শরীরের একপ্রকার সতর্ক সংকেত যা সময় মতো খাবার খাওয়ার বিষয়ে সংকেত দেয়। এটি নিজে থেকে সেরে যায় না, বরং সুষম খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত খাবারের অভ্যাসই হলো সেরা প্রতিকার। সুস্থ থাকতে হলে শরীরের এই সংকেতকে অবহেলা না করে, সময়মতো পানি পান ও খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
দৈএনকে/জে, আ
