শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫
Natun Kagoj

পারমাণবিক হামলার আট দশক: হিরোশিমায় নীরব শ্রদ্ধা ও প্রতিজ্ঞা

পারমাণবিক হামলার আট দশক: হিরোশিমায় নীরব শ্রদ্ধা ও প্রতিজ্ঞা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

জাপান আজ স্মরণ করছে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এক মুহূর্ত—হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০ বছর পূর্তি। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে, মার্কিন বিমান ‘এনোলা গে’ হিরোশিমা শহরের ওপর ‘লিটল বয়’ নামে একটি পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল, যা মুহূর্তেই শহরটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।

এই দিনটিকে কেন্দ্র করে হিরোশিমায় আয়োজিত হয় শান্তি ও স্মরণ অনুষ্ঠান। সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও বেঁচে থাকা হিবাকুশারা (বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া মানুষ) কালো পোশাক পরে অংশ নেন। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে তারা এক মিনিট নীরবতা পালন করেন শহিদদের স্মরণে।

স্মারক স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও যুদ্ধবিরোধী বার্তা দিয়ে অনুষ্ঠানটি ছিল শান্তির প্রতীক। পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা গম্বুজাকৃতির ধ্বংসস্তূপ আজও স্মরণ করিয়ে দেয় মানবজাতির সেই বিভীষিকাময় অধ্যায়।

জাপানে  সেই সময়ের কথা স্মরণ করে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। ভয়াবহ গরমের মধ্যে কালো পোশাক পরা সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও বেঁচে থাকা নাগরিকেরা শহিদদের স্মরণে স্মারক স্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল গম্বুজাকৃতির সেই ধ্বংসস্তূপ, যা আজও যুদ্ধের বিভীষিকা বহন করে চলছে।

হিরোশিমার মেয়র কাজুমি মাতসুই তার ভাষণে বলেন, বিশ্বজুড়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির প্রবণতা আবারও বেড়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা তার উদাহরণ। এই প্রবণতা ইতিহাসের থেকে পাওয়া শিক্ষাকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করছে।

এই দিনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা বলেন, বিশ্বকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়া জাপানের দায়িত্ব। হিরোশিমায় বোমা হামলায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হন। তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণ, আগুনের গোলা ও পরে বিকিরণের প্রভাবে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।

এর তিন দিন পর ৯ আগস্ট, নাগাসাকিতে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপে ৭৪ হাজার নিহত হন। ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পণ করে, যার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। বর্তমানে হিরোশিমা একটি উন্নত শহর, যেখানে ১২ লাখ মানুষ বসবাস করেন। কিন্তু সেই অতীতের ক্ষত এখনও জীবন্ত অনেকের স্মৃতিতে।

এবারের অনুষ্ঠানে প্রায় ১২০টি দেশ ও অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব ছিল, যার মধ্যে প্রথমবারের মতো তাইওয়ান ও ফিলিস্তিন অংশ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতও উপস্থিত ছিলেন, যদিও রাশিয়া ও চীন ছিল না অনুষ্ঠানে।

৯৬ বছর বয়সী ইয়োশি ইয়োকোয়ামা, যিনি তার নাতির সাথে হুইলচেয়ারে করে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন, তিনি সাংবাদিকদের বলেন যে তার বাবা-মা এবং দাদা-দাদি বোমা হামলার শিকার হয়েছেন।

তার কথায়, “বোমা হামলার পরপরই আমার দাদা মারা যান, আর আমার বাবা এবং মা দুজনেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আমার শ্বশুর-শাশুড়িও মারা যান, তাই যুদ্ধের পর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসার পর আমার স্বামী তাদের আর দেখতে পাননি। মানুষ এখনও কষ্ট পাচ্ছে।”

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেছেন যে, "যেসব অস্ত্র হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে এত ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে এনেছিল, সেগুলো আবারও জবরদস্তির হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।"

যুদ্ধকালীন সময়ে এই আক্রমণই একমাত্র পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের ঘটনা। শিশু অবস্থায় বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে যাওয়া ৮০ বছর বয়সী কুনিহিকো সাকুমা এএফপিকে বলেন, তিনি আশাবাদী যে অবশেষে একটি পারমাণবিক মুক্ত বিশ্ব হতে পারে। অনুষ্ঠানের আগে তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম সেই লক্ষ্যে কঠোর পরিশ্রম করছে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, বিশ্বের ১২ হাজারেরও বেশি ওয়ারহেডের প্রায় ৯০ শতাংশ রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে। তারা গত জুন মাসে সতর্ক করে দিয়েছিল যে "একটি বিপজ্জনক নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা এমন এক সময়ে দেখা যাচ্ছে যখন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে," প্রায় নয়টি পারমাণবিক-সশস্ত্র দেশগুলোর মধ্যে প্রায় সবই রাষ্ট্রগুলো তাদের অস্ত্রাগার আধুনিকীকরণ করছে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন