সম্মান রক্ষার নামে বোন-ভগ্নিপতিকে হত্যা করল যুবক


পাকিস্তানে পরিবারের অমতে বিয়ে করার পর এক বছর পেরোতেই প্রাণ গেল এক নবদম্পতির। রোববার (৩ আগস্ট) পাঞ্জাব প্রদেশের রাজনপুর জেলায় গুলি করে হত্যা করা হয় সাকলাইন ও আয়েশা নামের এই দম্পতিকে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়েশার ভাই তাদের গুলি করে হত্যা করে। ঘটনার পরপরই পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করেছে। পারিবারিক সম্মানের ইস্যুকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, সাকলাইন ও আয়েশা নিজেদের বাড়িতে ছিলেন। হঠাৎ আয়েশার ভাই বাড়িতে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করা শুরু করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান সাকলাইন ও আয়েশা। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তকে আটক করে। তবে, এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি।
জেলা পুলিশ অফিসার ফারুক আমজাদ ডনকে জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছে তারা। প্রাথমিক তদন্তে ‘অনার কিলিং’-এর কারণে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
এর আগে গত মে মাসেও এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটে পাকিস্তানে। প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোয় গুলি করে হত্যা করা হয় এক প্রেমিক যুগলকে। মে মাসের ওই ঘটনাটি ছিল বেলুচিস্তানের। পুলিশ জানায়, একজন গোত্রপ্রধানের নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই গোত্রপ্রধান এই সম্পর্ককে তাঁদের গোত্রের মর্যাদার জন্য হুমকি বলে মনে করেছিলেন। ঘটনাটি ‘অনার কিলিং’ বা তথাকথিত সম্মান রক্ষার নামে হত্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাকিস্তানসহ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার কিছু অঞ্চলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রায় সময়ই ঘটে। ওই ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
‘অবৈধ’ সম্পর্কের অভিযোগে নর-নারীকে হত্যা করল নিজ সম্প্রদায়, পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া‘অবৈধ’ সম্পর্কের অভিযোগে নর-নারীকে হত্যা করল নিজ সম্প্রদায়, পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে প্রতিবছর শত শত অনার কিলিংয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। কারণ, অনেক ঘটনা গোপনেই থেকে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীদের নিজেদের পছন্দে বিয়ে করা, বিবাহবিচ্ছেদের চেষ্টা কিংবা সামাজিক নিয়ম ভাঙার মতো কারণেই এমন হত্যার শিকার হতে হয়। এ ধরনের হত্যার পেছনে রয়েছে গভীরভাবে প্রোথিত পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও দুর্বল আইনি প্রয়োগ। এর ফলে এই ধরনের হত্যাকাণ্ডের পরও অপরাধীরা প্রায় সময়ই পার পেয়ে যায়।
২০১৬ সালে সোশ্যাল মিডিয়া তারকা কান্দিল বালুচকেও তাঁর ভাই পারিবারিক সম্মান রক্ষার কথা বলে হত্যা করলে পাকিস্তানজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এবং আইন পরিবর্তনের দাবিও ওঠে। বর্তমানে পাকিস্তানে অনার কিলিংয়ের সর্বোচ্চ সাজা আজীবন কারাদণ্ড করা হয়েছে। তবে আইনি পরিবর্তন ঘটলেও এই ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড থেমে নেই।
২০২৪ সালেই পাকিস্তানে ৩৩৫ নারী ও ১১৯ পুরুষ অনার কিলিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন।
