মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম

ঘন কাশি ও বুক জ্বালাপোড়া? হতে পারে অ্যাসিড রিফ্লাক্স

ঘন কাশি ও বুক জ্বালাপোড়া? হতে পারে অ্যাসিড রিফ্লাক্স
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেকেই বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যায় ভোগেন। কারো কারো ক্ষেত্রে সারাদিনই অস্বস্তিকর এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই মেলে না। অনেক সময় এই সমস্যা গলা পরিষ্কার করতে থাকা, মুখে টক স্বাদ বা দীর্ঘদিনের কাশিতেও রূপ নিতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, এসবের অন্যতম কারণ হতে পারে অ্যাসিড রিফ্লাক্স যা বেশিরভাগ সময় আমাদের খাওয়ার সময়সূচির অনিয়মের ফলেই ঘটে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবারের পুষ্টিগুণ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হলো কোন সময়ে খাওয়া হচ্ছে। অনেকেই নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান, কিন্তু সঠিক সময়ে না খাওয়ার কারণে হজমের সমস্যা এবং অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা দেখা দেয়।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স: অ্যাসিড রিফ্লাক্স হলো এমন একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালিতে ফিরে আসে। পাকস্থলীর আসিডে সমস্যা না হলেও খাদ্যনালিতে তা সহ্য হয় না। এর ফলে বুকে জ্বালা, গলায় অস্বস্তি, টক ঢেকুর কিংবা এমনকি দীর্ঘমেয়াদি কাশিও দেখা দিতে পারে। অনেক সময় এই উপসর্গগুলো অ্যালার্জি বা অ্যাজমা ভেবে ভুল চিকিৎসা করা হয়।

ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান ডা. রিধিমা খামসেরা জানান, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের একটি ধরন আছে যাকে বলা হয় ‘সাইলেন্ট রিফ্লাক্স’। এই অবস্থায় বুক জ্বালার মতো প্রচলিত উপসর্গ না থাকলেও গলা খুসখুসে অনুভব করা, কণ্ঠস্বরের পরিবর্তন বা দাঁতের ক্ষয় হতে পারে। অনেক সময় এই ধরনের রিফ্লাক্স বছরের পর বছর ধরা না পড়ে এবং ভিন্ন কারণে চিকিৎসা চলতে থাকে।

খাওয়ার আদর্শ সময়সূচি: সঠিক সময়মতো খাওয়া অ্যাসিড রিফ্লাক্স প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

  • সকালের খাবার: সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে
  • সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে হালকা নাস্তা
  • দুপুরের খাবার: দুপুর ১টা থেকে ২টার মধ্যে
  • বিকেলের নাস্তা: বিকেল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে
  • রাতের খাবার: সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ঘুমানোর অন্তত ২ ঘণ্টা আগে

যেসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত: নিয়মিত অ্যাসিড রিফ্লাক্সে ভোগা ব্যক্তিদের কিছু নির্দিষ্ট খাবার থেকে দূরে থাকা জরুরি—

  • মশলাদার খাবার: অতিরিক্ত ঝাল বা তীব্র মসলা পাকস্থলীতে অ্যাসিড তৈরি করে
  • সাইট্রাস ফল: যেমন লেবু বা কমলা, পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে
  • ক্যাফেইন: কফি বা চা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ঝুঁকি বাড়ায়

ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার: হজমে বাধা দিয়ে অ্যাসিড বাড়াতে পারে

করণীয়: সঠিক সময়ে হালকা খাবার খাওয়া, কম মসলা ব্যবহার, পর্যাপ্ত পানি পান এবং ধূমপান বা অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। পাশাপাশি উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ সময়মতো চিকিৎসা না হলে এই সাধারণ সমস্যা থেকেই গ্যাস্ট্রিক আলসার, ইসোফ্যাজিয়াল ইনজুরি এমনকি খাদ্যনালির ক্যানসারের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।

নিয়মিত কাশি, গলা জ্বালা বা কণ্ঠস্বরে পরিবর্তনের মতো উপসর্গগুলোকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এগুলো অনেক সময় সাইলেন্ট রিফ্লাক্সের ইঙ্গিত হতে পারে, যা ধীরে ধীরে আপনার গলা, কণ্ঠনালি এমনকি ফুসফুসেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই যেকোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের সময়সূচি ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় ছোট ছোট পরিবর্তন এনে এই সমস্যার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।


দৈএনকে/জে, আ
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন