ভবদহে আবারও স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা


যশোর-খুলনার দুঃখ ভবদহে আবারও স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষণে ভবদহের প্রায় অনেক গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে।
ভবদহ অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা আবারও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এ সমস্যায় বছরের পর বছর ধরে ভুগছে ভবদহের মানুষ। কয়েক দশকে বিভিন্ন সরকার এ অঞ্চলের জলবদ্ধতা নিরসনে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে বিগত সরকারের আমলে কয়েক শ কোটি টাকা খরচ ও করা হয়েছে একাধিক প্রকল্পে কিন্তু ভগদহের মানুষের দুঃখ ঘোচেনি।
এ সব গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগের কবলে পড়ে পরিবার-পরিজন ও গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অতিবৃষ্টি জনিত কারণে ভবদহের বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চলে এখন অথৈ পানি আর পানি। পলি পড়ে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকায় দিন দিন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জলাবদ্ধ এলাকার অধিকাংশ রোপা আমন ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে, অন্যান্য ফসলাদি বিশেষ করে বিভিন্ন জাতের সবজির ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
মৎস্য ঘের, পুকুর-ডোবা ভেসে গেছে প্রায় ৫ সহস্রাধিক। প্রায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও জানানো হয়নি। তবে মাছের ঘের, পুকুর-জলাশয় ভেসে, রোপা আমন ধান ও সব্জির ক্ষেত ডুবে যেয়ে শত কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের টানা ভারী বর্ষণে মণিরামপুর উপজেলার বিল বোকড়, বিল কেদারিয়া, বিল খুঁকশিয়া,বিল কপালিয়া,আড়পাতার বিল, ঝিলদহের বিলসহ ভবদহের বিভিন্ন বিলাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে।
এছাড়া যশোর সদর,অভয়নগর,কেশবপুর উপজেলা ও খুলনার ডুমুরিয়া,ফুলতলা উপজেলার বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মধ্যে কুচলিয়া, নেবুগাতি, পাঁচ বাড়িয়া ,পাঁচকাটিয়া, ভুলবাড়িয়া, কুমারসীমা, , রাজাপুর, সুন্দলী, ভাটবিলা, সড়াডাঙ্গা, হরিশপুর, ফুলেরগাতি, দামুখালী, দত্তগাতি, জিয়াডাঙ্গা ও ডুমুরতলা, আন্ধা, বারান্দী, দিঘলিয়া, কোটা হাটগাছা, কুলটিয়া, সুজাতপুর, লখাইডাঙ্গা, মহিষদিয়া, আলীপুর, পোড়াডাঙ্গা, পদ্নানাথপুর, পাড়িয়ালী, দহাকুলা, বালিধা, পাঁচাকড়ি, নেহালপুর,কপালিয়া, মশিয়াহাটি গ্রামসহ অন্তত ১০০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এ সব এলাকার অধিকাংশ মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। এলাকার বেশীরভাগ বসতবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভবদহ অধ্যুষিত যশোরের মণিরামপুরসহ অভয়নগর, কেশবপুর, যশোর সদর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার বহু গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত-ভুক্তভোগী অধিকাংশ মানুষের অভিযোগ, ভবদহের বিলাঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে মাছের ঘের তৈরি করায় পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ভবদহে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। যা পরর্বতীতে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়।
তাছাড়া ভবদহের জলাবদ্ধতার শিকার ভুক্তভোগী মানুষের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ লাঘবে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন বিলাঞ্চলে পরিকল্পিত জোয়ার আধার প্রকল্পের দাবি আজও উপেক্ষিত রয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
জনগণের একটিই কথা ভবদহ অঞ্চলের বিলসমূহে পর্যায়ক্রমে টিআরএম (টাইটাল রিভারস ম্যানেজমেন্ট তথা জোয়ার আধার প্রকল্প) চালুর মাধ্যমে ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব।
টিআরএমকে উপেক্ষা করে নদীখনন,পলী অপসারণ,বাধঁনির্মাণসহ বিভিন্ন সময়ে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট গ্রহণ করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং এসব প্রজেক্টে বিভিন্ন সময়ে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘদিনের পরিক্ষীত ও গ্রহণযোগ্য প্রকল্প জোয়ারাধার (টিআরএম-টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বর্তমানে ভবদহের কোন বিলে কার্যকর নেই। এ অবস্থায় ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীতে ব্যাপক হারে পলি জমে বিলের পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ভবদহ স্লুইচ গেটের ২১ কপাটের (ভেন্ট) উজান ও ভাটিতে শ্রী নদীতে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে গেছে। ফলে ভবদহ এলাকার বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
আন্দোলনকারী ও ভুক্তভোগীরা তাই ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসনে টেকসই কার্যকর প্রকল্প গ্রহণের দাবী জানান। পাশাপশি অতিতে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসেন গৃহীত প্রকল্পের লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের বিচারের দাবী জানান।
