এসিসি সভা ঘিরে জট, বোঝাপড়ার বাইরে বুলবুল?


পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি শুধু ক্রিকেট প্রশাসকই নন—তিনি এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বর্তমান সভাপতি এবং পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। রাজনীতি ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রের অভিজ্ঞতাকে সঙ্গে নিয়েই যেন ক্রিকেট প্রশাসনেও সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন তিনি।
তবে তার সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে বলে মনে করছেন দেশের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকে। তাঁদের মতে, মহসিন নাকভির সঙ্গে কিছু বিষয় সরল বিশ্বাসে মেনে নেওয়ার কারণে বিসিবি কিছুটা ‘বেকায়দায়’ পড়ে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও কৌশলী নাকভির সঙ্গে কূটনৈতিক দূরত্ব না রাখাটা বিসিবির জন্য কিছুটা অস্বস্তিকর অবস্থান তৈরি করেছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এ বিষয়ে কিছু জানায়নি, তবে অভ্যন্তরীণভাবে পরিস্থিতি নিয়ে কিছুটা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ক্রিকেট প্রশাসনে রাজনৈতিক প্রভাব নতুন নয়। তবে একজন দায়িত্বশীল আন্তর্জাতিক সংগঠনের সভাপতি এবং একইসঙ্গে একটি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার ফলে তার সিদ্ধান্তগুলোর প্রভাব কখনো কখনো জটিলতা তৈরি করতে পারে—সাম্প্রতিক ঘটনাটি যেন তারই ইঙ্গিত।
আলোচিত সেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এসিসির বার্ষিক সাধারণ সভা ঢাকায় আয়োজন। তার চাওয়াতেই এই সিদ্ধান্তে সম্মতি দেন বিসিবির নতুন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। কিন্তু এই সভা নিয়ে ভালোই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য সভা বয়কটের ডাক দিয়েছে ভারত। তাতে শ্রীলংকা, আফগানিস্তান, ওমানের মতো দেশগুলোও ভারতের আচলের তলে আশ্রয় নিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে পরিচালকদের সঙ্গে আলোচনা না করে ঢাকায় এসিসির সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের ক্রিকেটকে কি বিপদের মুখে ঠেলে দিলেন বুলবুল, তা নিয়ে কানাঘুষা চলছে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
বিসিবির এক কর্মকর্তা দেশের একটি গণমাধ্যমকে জানান, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সঙ্গে আলোচনা না করে মহসিন ঢাকায় এজিএমের ভেন্যু ঠিক করেন। বিশ্ব ক্রিকেটের মোট রাজস্বের সিংহভাগ আসে ভারতের বিজ্ঞাপন থেকে। ভারত ছাড়া এশিয়া কাপ চিন্তাও করা যায় না। তারা খেলতে রাজি না হলে টুর্নামেন্টটি আয়োজন করা সম্ভব হবে না। সেখানে ভারতের সঙ্গে শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তান জোট বেঁধেছে। এই পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালে এশিয়া কাপও ঝুঁকির মুখে।
বিসিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কাউকে কিছু না জানিয়ে এসিসির এজিএম ঢাকায় নেওয়া ঠিক হয়নি। দেশের ক্রিকেটের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। সম্ভবত ভারত আগামী দুই বছর খেলতে আসবে না। বিসিবি তো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।’
প্রসঙ্গত, এসিসির সদস্য সংখ্যা ২৭ হলেও আইসিসির পাঁচ পূর্ণ সদস্য দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানই এই এ্যাসোসিয়েশনে প্রভাব বিস্তার করে। তাই প্রভাবশালী পাঁচ দেশের তিনটি সভা বয়কট করলে এর কার্যকারিতা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। এশিয়া কাপ না হলে বাংলাদেশ ১০ লাখ ডলার বা ১২ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হবে। যেটাকে বড় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন বিসিবি কর্মকর্তারা।
