"শিক্ষার্থী ভিসা সীমিতকরণের পথে যুক্তরাষ্ট্র: আলোচনায় সময়সীমা"


যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রতিবছর হাজারো শিক্ষার্থী বিভিন্ন দেশ থেকে এফ-১ ভিসায় দেশটিতে প্রবেশ করেন। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়াই এই ভিসার মূল উদ্দেশ্য। তবে অনেকে পড়াশোনা শেষ করার পরও নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ না করে দীর্ঘ সময় ধরে দেশটিতে অবস্থান করেন, যা অভিবাসন নীতির দিক থেকে কিছুটা জটিলতা তৈরি করে।
এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থী ভিসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। প্রস্তাব অনুযায়ী, এফ-১ ভিসায় নির্দিষ্ট মেয়াদের একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশ ত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।
উদ্যোগটির পেছনে যুক্তি ছিল—নিয়মিত অভিবাসন তদারকি এবং অবৈধভাবে অবস্থান রোধ। যদিও এই প্রস্তাব নানা মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। শিক্ষাক্ষেত্রে বৈচিত্র্য ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবদান কমে যেতে পারে—এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই।
তবে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে এ ধরনের প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। বর্তমানে শিক্ষার্থী ভিসার মেয়াদ সাধারণত শিক্ষার সময়কাল অনুযায়ী বিবেচিত হয় এবং তা নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমায় সীমাবদ্ধ নয়।
বর্তমানে এফ-১ ভিসায় কোনো নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারিত নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের কোর্স শেষ করার পরও কিছুদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ভবিষ্যতে প্রতিটি শিক্ষার্থী ভিসায় নির্দিষ্ট মেয়াদ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক করা হবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যদি কোনো শিক্ষার্থী ভিসা নবায়ন না করেন, তাহলে তাকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গণ্য করা হবে এবং মার্কিন আইন অনুযায়ী তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ট্রাম্প ২০২০ সালেও এই ধরনের একটি বিল কংগ্রেসে পেশ করেছিলেন, তবে সেই বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থাকায় বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়নি এবং বিলের বিস্তারিত বিষয়বস্তু তখন প্রকাশ হয়নি।
এবার নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বিলটি কংগ্রেসে পাঠিয়েছে। এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিলটিতে বলা হয়েছে— সব শিক্ষার্থী ভিসার মেয়াদ স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর যথাসময়ে নবায়ন না করলে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে শুধু অবৈধ অভিবাসীদের নয়, বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিও কড়াকড়ি আরোপ শুরু করেছেন।
সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২০ কোটি ডলারের সরকারি অনুদান আটকে দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, হার্ভার্ড যদি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে, তবে অনুদান আবার চালু করা হবে। হার্ভার্ড প্রশাসন এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
