যশোরের কেশবপুর দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের হামলা-মামলার হুমকি


যশোরের কেশবপুর পৌরসভার সচিব আবুল ফজল মোহাম্মদ এনামূল হক মিঠুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের রিরুদ্ধে হামলা-মামলার হুমকি দিয়েছেন সচিব মিঠু। তার বিরুদ্ধে চাকরি না দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সাবেক কর্মস্থল ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভায় দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকালে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগের তথ্য সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের সাথে এমন ঘটনা ঘটে।
মিঠু চৌগাছা থানার নারায়নপুর গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট আহসানুল হকের আপন ছোট ভাই আবুল ফজল মোহাম্মদ এনামূল হক মিঠু স্থানীয় একটি অস্ত্রধারী বাহিনীর প্রধান হওয়ার কারণে এবং ভাইয়ের পদ ব্যবহার করে ও দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে অবৈধ সম্পদ গড়ে তোলা, বিলাসি জীবনযাপনসহ লাগামহীন দুর্নিতির অভিযোগে অভিযুক্ত।
এর আগেও অভিযুক্ত মিঠুকে নিয়ে অস্ত্র, নারী, মাদক, দুর্নীতি সংঘটিত বিষয়ে স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকায় বিভিন্ন শিরোনামে একাধিক খবর প্রকাশিত হয়। অর্থ এবং বড় ভাইয়ের আইনের অবৈধ ব্যবহারে ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে সকল অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে সে।
আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের ৫ আগষ্ট দেশ ত্যাগের পর থেকে মিঠু আত্মগোপনে গেলেও তার বাহিনী এখনও এলাকায় তাদের অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সচিব মিঠুর ব্যাপারে কোটচাঁদপুর পৌরসভায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তার বিরুদ্ধে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, অনেক ব্যাক্তি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করেন। এনামুল হক মিঠু এবং সাবেক পৌরসভার চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় পৌরসভার কর্মচারীদের বেতন, উন্নয়ন তহবিল, বিভিন্ন প্রকল্প, হাট বাজারের ইজারা থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকা এবং এডিপি উন্নয়নের ৮৭ লক্ষ টাকা বিভিন্ন প্রকার ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যায়। উক্ত বিষয়ে রথীন্দ্র নাথ রায়, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার, ঝিনাইদহ গত ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে এনামুল হক মিঠুকে স্বশরীরে ১৮জুলাই-২০২৪ তারিখে উপস্থিত হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করিলেও তিনি ক্ষমতার জোরে উপস্থিত হননি বা লিখিত কোন উত্তর দেননি।
উল্লেখ্য , এনামুল হক মিঠু একটানা ২৪ বছর একই পৌরসভায় সচিব পদে অধিষ্ঠিত আছেন। তিনি প্রতি মাসে ২-৪ দিনের বেশি অফিস না করেও নিয়মিত বেতন উত্তোলন করেছেন। গত ৫ আগষ্ট থেকে তিনি অদ্যাবধি পর্যন্ত পৌরসভায় উপস্থিত হননি। উক্ত বিষয়ে পৌরসভার প্রধান সহকারীর কাছে জানতে চাইলে উত্তরে বলেন, সচিব মিঠু সাহেব ৩বার ছুটির আবেদন করেছেন। যা অফিস কর্তৃপক্ষ আমলে নেননি। পরবর্তীতে তিনি সুস্থ আছেন বলে ১ ডিসেম্বর-২০২৪ তারিখ থেকে অফিস করবেন বলে আরও একটি চিঠি প্রেরণ করেন। কিন্তু অদ্যাবধি যোগদান করেননি।পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সচিব মিঠুকে বহুবার কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করলেও তিনি কোন সদুত্তর দেননি। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১ ডিসেম্বর-২০২৪ তারিখে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সকল নথি প্রেরণ করেন।
উক্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসক ঝিনাইদহ অফিসে স্থানীয় সরকার শাখায় যোগাযোগ করা হলে উক্ত শাখার সিএ মাহবুবুর রহমান সকল বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং সচিব মিঠুর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে সাংবাদিকদের জানান।উল্লেখ্য নারায়নপুর বাহরাম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন অভিভাবককে জোরপূর্বক অস্ত্র ঠেকিয়ে এবং অত্র এলাকার বিদ্যুৎকে বেধড়ক মারপিট করে ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের সহযোগিতায় সভাপতি পদ জোর করে দখল করে নেন।
অস্ত্রধারী মিঠু সম্পর্কে চৌগাছা থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে জানতে চাইলে তিনি মিঠুর বিরুদ্ধে চৌগাছা থানায় একাধিক অভিযোগ আছে বলে জানান এবং তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে অবহিত করেন। আবুল ফজল মোহাম্মদ এনামূল হক মিঠুর ব্যাপারে এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে কথা বললে এলাকাবাসী তার বিচারের জোর দাবী জানান। এতো অভিযোগের পরেও হটাৎ করে জানা যায় সচিব মিঠু এখন যশোরের কেশবপুর পৌরসভায় বহাল তবিয়তে সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। উপরোক্ত বিষয়ে সচিব মিঠু অফিসে বক্তব্য নিতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হামলা মামলার হুমকি দেন।
