২০২৫ সালে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি ও প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ


২০২৫ সালের মাঝামাঝি এসে বাংলাদেশের জলবায়ু সংকট আরও গভীরতর হয়েছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ, কৃষি ও জনস্বাস্থ্যে প্রভাব—সব ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। সরকার ও সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ হলেও, ঝুঁকি এখনও অপরিসীম।
অস্বাভাবিক গরম: গত ২০ বছরে সবচেয়ে তীব্র
২০২৫ সালের গ্রীষ্মকালেই দেখা গেছে, দেশের গড় তাপমাত্রা গত দুই দশকে সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। বিগত ৫ মাসে প্রায় ১.৫ কোটি মানুষ তাপদাহের কারণে অসুস্থতাজনিত চিকিৎসা নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে "হিটস্ট্রোক" ও "ডিহাইড্রেশন" রোগের সংখ্যা বেড়েছে ২৫%।
বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়: ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বেড়েছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর পানির স্তর অতীতের তুলনায় ১৫% বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সিলেট, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চল ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) জানাচ্ছে, ২০২৫ সালে চলতি মৌসুমে অধিকাংশ ফসলের ফলন গত বছরের তুলনায় ১০-২০% কম হবে। লবণাক্ততা ও বন্যার কারণে অধিকাংশ উপকূলীয় কৃষিজমি এখন অনাবাদি।
সরকার ‘জলবায়ু-সহিষ্ণু ফসল’ উৎপাদনের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং মধুমাছি চাষসহ বিকল্প উপার্জনের পথ দেখাচ্ছে।
UNICEF ও WHO এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২৫ সালে শিশুমৃত্যুর হার সামান্য হলেও বেড়েছে বন্যা ও রোগজীবাণুর সংক্রমণের কারণে।
শিক্ষা কার্যক্রমেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে—বিশেষ করে বন্যা-প্রবণ অঞ্চলে স্কুল বন্ধের ঘটনা বেড়েছে। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারণ কিছুটা এই ফাঁক পূরণ করেছে।
আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১.৮% কমে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও কৃষিখাত পুনরুদ্ধারে সরকারি বাজেট বৃদ্ধির পরেও প্রভাব পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
সরকার ও সমাজের উদ্যোগ
* জাতীয় জলবায়ু কর্মপরিকল্পনা ২০২৫ নামে একটি বিস্তারিত কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে জলের সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বন সংরক্ষণ ও সবুজ শক্তি প্রসারে নজর দেওয়া হয়েছে।
* স্থানীয় পর্যায়ে ‘জলবায়ু সচেতনতা’ কর্মশালা ও বনায়ন কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
* আন্তর্জাতিক সহায়তায় ‘সবুজ শহর’ প্রকল্প চালু হচ্ছে, যা দূষণ কমানো এবং পরিবেশ বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন শুধু পরিবেশগত বিষয় নয়, এটি দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার প্রশ্ন। সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আগামী দশকে প্রভাব ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশে প্রতিটি নাগরিক, প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক সংস্থাকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা জলবায়ুর এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারি।
