দাম্পত্য জীবন: শুধু সম্পর্ক নয়, এক পবিত্র সহযাত্রা


স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক শুধু একটি বন্ধন নয়, এটি ভালোবাসা, সম্মান এবং পারস্পরিক সহযোগিতার এক পবিত্র সেতুবন্ধন। ইসলাম এই সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। তবে জীবনের পথে চলতে গিয়ে কখনো কখনো পারিবারিক জীবনে ছোট-বড় সমস্যা আসতেই পারে। এমন পরিস্থিতিতে ইসলাম আমাদের কী শেখায়? এর উত্তর লুকিয়ে আছে ধৈর্য, সহনশীলতা আর ন্যায়ের মূলনীতিতে।
ধৈর্য ধরুন, ভালো দিকগুলো দেখুন
পারিবারিক জীবনে যখন স্ত্রীর আচরণ আপনার মন মতো না হয়, তখন ইসলাম স্বামীকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে। এর প্রতিদান হিসেবে পরকালে রয়েছে মহাপুরস্কারের ঘোষণা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ যেন কোনো মুমিন নারীকে অপছন্দ না করে। যদি সে তার একটি অভ্যাস অপছন্দ করে, তবে অন্য অভ্যাস তার পছন্দ হবে।’(মুসলিম)
এর অর্থ হলো, আপনার স্ত্রীর মধ্যে হয়তো এমন কিছু গুণ আছে যা আপনার পছন্দ নয়, কিন্তু তার আরও অনেক ভালো দিক আছে, যা আপনার জীবনকে সুন্দর করে রেখেছে। তিনি হয়তো আপনার জন্য রান্না করেন, সংসার সামলান, আপনার সন্তানদের লালন-পালন করেন এবং প্রতিনিয়ত আপনার খেদমত করেন। এই অসংখ্য সেবার বিনিময়ে যদি কখনো তার পক্ষ থেকে সামান্য কষ্ট পান, তবে তা সহ্য করে নেওয়া একজন স্বামীর কর্তব্য।
এই প্রসঙ্গে লোকমান হাকিমের একটি ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি:
একবার লোকমান হাকিমকে তার মনিব একটি তরমুজের টুকরা খেতে দিলেন। তিনি আনন্দের সাথে খেলেন। মনিব তরমুজের শেষ টুকরাটি মুখে নিয়েই ফেলে দিলেন, কারণ সেটি ছিল খুবই তেতো। মনিব অবাক হয়ে বললেন, তরমুজটা এত তেতো ছিল, তুমি কীভাবে খেলে? লোকমান হাকিম উত্তর দিলেন, আপনার হাত থেকে জীবনে কত মিষ্টি জিনিস খেয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই। আজ না হয় একটু তেতো পেলাম, তাই বলে কি সেই নেয়ামতগুলোর কথা ভুলে যাব?
এই কৃতজ্ঞতা আমাদের শেখায় যে, স্ত্রীর কিছু খারাপ দিক থাকলেও তার ভালো দিকগুলোর কথা মনে রাখলে সম্পর্ক আরও মধুর হয়। তার দেওয়া সুখের দিকে নজর দিলেই দুঃখের অনুভূতি কমে যায়।
সৌন্দর্যের মাপকাঠিতে নয় ভালোবাসার দৃষ্টিতে
যদি কোনো কারণে আপনার স্ত্রী দেখতে সুন্দরী না হন বা আপনার মন মতো না হন, আর এতে আপনার মন অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবে ইসলাম এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেয়। ভাবুন তো, সৌন্দর্য তো আল্লাহর দান। আপনার স্ত্রী হয়তো তার নেক আমলের কারণে আপনার মতো সুদর্শন স্বামী পেয়েছেন, আর আপনি হয়তো আপনার পাপের কারণে এমন স্ত্রী পেয়েছেন। এভাবে দেখলে, তিনি আপনার পাপের প্রায়শ্চিত্তের কারণ, আর আপনি তার নেক আমলের প্রতিদান।
ইসলাম বলে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে আপনার মনকে নিজ স্ত্রীর প্রতি মনোযোগী করুন। কারণ একজন নারী তার বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে ছেড়ে আপনার কাছে এসেছেন। আপনিই তার একমাত্র ভরসা। তাই আপনি যদি তার দুঃখের কারণ হন, তবে তার জীবনে আর কার কাছে সে সুখ আশা করবে?
মনে রাখবেন, হাদিসে বলা হয়েছে, ‘উক্ত নারীর মাঝে যা আছে, নিজ স্ত্রীর মাঝেও তাই আছে।’ (সুনানে দারেমি ২৩৮৮)। অর্থাৎ একজন পুরুষের তৃপ্তির জন্য তার স্ত্রী-ই যথেষ্ট।
অতএব, আসুন আমরা সবাই সহনশীলতা এবং ভালোবাসার মাধ্যমে নিজেদের দাম্পত্য জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলি। মনে রাখবেন, একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ভালোবাসা, সম্মান এবং ধৈর্যই সবচেয়ে বড় শক্তি।
দৈএনকে/জে .আ
