জিম্মিদের জন্য ত্রাণ নিতে ইসরায়েলি হামলা বন্ধের দাবি হামাসের


গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের জন্য রেডক্রসের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছে দিতে প্রস্তুত হামাস, যদি ইসরায়েল নির্দিষ্ট শর্তগুলো পূরণ করে। রবিবার (৩ আগস্ট) হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেডক্রসের সঙ্গে যেকোনও সমন্বয় ইসরায়েলের উপর নির্ভর করবে। হামাস দাবি করেছে, ইসরায়েলকে অবশ্যই স্থায়ী মানবিক করিডোর খুলতে হবে এবং ত্রাণ বিতরণের সময় বিমান হামলা বন্ধ রাখতে হবে। এই খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে,বর্তমানে গাজায় ৫০ জন জিম্মি অবস্থান করছেন। এদের মধ্যে মাত্র ২০ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামাস এতদিন মানবিক সংস্থাগুলোকে জিম্মিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি এবং পরিবারগুলো তাদের অবস্থার বিষয়ে খুব কম বা কোনও তথ্যই পায়নি।
শনিবার হামাস টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইসরায়েলি জিম্মি এভিয়াতার ডেভিডের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। এতে ডেভিডকে কঙ্কালসার অবস্থায় নিজের কবর খুঁড়তে দেখা যায়। ভিডিওতে তিনি নিজেই বলেন, এটি তার নিজের জন্য খোঁড়া হচ্ছে। ভিডিওতে ক্যামেরা ধারণকারী ব্যক্তির হাত দৃশ্যমান।
ডেভিডের এই ভিডিওটি পশ্চিমা শক্তিগুলোর সমালোচনার মুখে পড়ে এবং ইসরায়েলিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ ক্ষোভ প্রকাশ করে। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়,মঙ্গলবার সকালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় জিম্মিদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ অধিবেশন করবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তিনি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক রেডক্রসের স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে জিম্মিদের জন্য মানবিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান।
গাজায় আটক ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন- দ্য হোস্টেজ ফ্যামিলিস ফোরাম তাদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘তাদের মুক্তির আগ পর্যন্ত, হামাসের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করা। হামাস তাদের অপহরণ করেছে। সুতরাং তাদের যত্ন নেওয়া হামাসের দায়িত্ব। প্রতিটি জিম্মির মৃত্যুর দায় হামাসকেই নিতে হবে।’
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় অনাহার বা অপুষ্টিজনিত কারণে আরও ছয়জন মারা গেছে। ইসরায়েল বলেছে, তারা এই মানবিক সংকটে জর্জরিত এলাকায় জ্বালানি সরবরাহ করতে দিয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই নতুন মৃত্যুর ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫ জনে,যার মধ্যে ৯৩ জনই শিশু।
ইসরায়েল কয়েক মাস ধরে গাজায় সাহায্য প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার পর সম্প্রতি তা কিছুটা শিথিল করে,যখন অনাহার ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
ত্রাণ সরবরাহের সমন্বয়কারী ইসরায়েলি সামরিক সংস্থা জানিয়েছে, গাজায় জাতিসংঘের জন্য চারটি জ্বালানিবাহী ট্যাঙ্কার প্রবেশ করেছে-যা হাসপাতাল, বেকারি,গণরান্নাঘর এবং অন্যান্য জরুরি সেবার জন্য ব্যবহৃত হবে।
তবে দুটি ডিজেল ট্রাক গাজায় মিসর থেকে প্রবেশ করেছে কিনা,তার কোনও তাৎক্ষণিক নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জ্বালানির ঘাটতির কারণে হাসপাতালের কার্যক্রম গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকদের কেবল মারাত্মকভাবে আহত বা সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসায় মনোযোগ দিতে হচ্ছে।
গত মার্চ থেকে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ ও জ্বালানির চালান সীমিত করে ইসরায়েল। তাদের দাবি, এই ব্যবস্থা হামাসের ওপর চাপ তৈরি করবে, যাতে তারা ২০২৩ সালের অক্টোবরের হামলায় অপহৃত বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেয়।
ইসরায়েল গাজায় দুর্ভোগের জন্য হামাসকে দায়ী করেছে। তবে আন্তর্জাতিক মহলের ক্রমবর্ধমান চাপের প্রেক্ষিতে তারা গত সপ্তাহে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে — দিনের কিছু সময় যুদ্ধবিরতি,বিমান থেকে ত্রাণ ফেলা এবং ত্রাণ বহনকারী গাড়ি বহরের জন্য নিরাপদ রুট ঘোষণা।
জাতিসংঘের সংস্থাগুলো বলছে, আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ যথেষ্ট নয়। ইসরায়েলের উচিত আরও বেশি পরিমাণে স্থলপথে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া এবং গাজার ২২ লাখ মানুষ — যাদের বেশিরভাগই বাস্তুচ্যুত এবং ধ্বংসস্তূপে বসবাস করছে, তাদের অনাহার থেকে রক্ষার জন্য গাজায় ত্রাণ প্রবেশের পথ খুলে দেওয়া।
