শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • গাজীপুরে শাপলা তুলতে গিয়ে বিলে ডুবে দুই বন্ধুর করুণ মৃত্যু গুলশানে চাঁদা দাবির ঘটনায় আরও এক ছাত্রনেতা গ্রেফতার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন ২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য বড় ধাক্কা আসতে পারে শাহবাগে জুলাই সনদ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি, যান চলাচল বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি কূটনৈতিক বিজয়: প্রধান উপদেষ্টা রাজধানীতে ‘গোপন বৈঠক’: নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ২২ জন গ্রেপ্তার পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের কড়া বার্তা সংসদের উচ্চকক্ষ ১০০ আসনের, সদস্য মনোনয়ন হবে আনুপাতিক হারে পলিথিন ও শব্দ দূষণ রোধে জরিমানা, জব্দ ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন
  • হোসেনপুরে ভবন নির্মাণকাজে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ 

    হোসেনপুরে ভবন নির্মাণকাজে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ 
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পিতলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মাণাধীন বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ভবনের নির্মাণকাজে ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। 

    প্রায় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এ প্রকল্পে শুরু থেকেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে চলছে কাজ। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ।

    স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএন এন্টারপ্রাইজ প্রকল্প শুরুর পর থেকেই নাম-নম্বরবিহীন, আকারে ছোট এবং নিম্নমানের ইট, কাদাযুক্ত বালু ও পরিমাণে কম সিমেন্ট দিয়ে কাজ করে আসছে। এমনকি তিন ধাপে ছাদ ঢালাই করা হয়েছে, যা ভবনের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এলাকাবাসীর একাধিক অভিযোগ সত্ত্বেও উপজেলা প্রশাসন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাদের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

    স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবকরা বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইসতিয়াক হোসাইন উজ্জ্বল কাজের তদারকির কথা থাকলেও তাদের সেখানে দেখা যায়নি। দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ঠিকাদার ইচ্ছামতো কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে দুর্নীতির চিত্র এতটাই ভয়াবহ যে হাতের স্পর্শেই খসে পড়ছে ভবনের বিভিন্ন অংশ। এই ভবনে আমাদের সন্তানরা ক্লাস করবে, অথচ এখনই দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। 

    জানা গেছে, পিতলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র (৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প ২০২২-২৩ সালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এ কাজটি শুরু হয়। প্রায় ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকায় আশ্রয়কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছেন এসএন এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবনটি বন্যা ছাড়াও বিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদানের জন্য ব্যবহৃত হবে। দুর্যোগে চার শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে ভবনটিতে। থাকবে বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, টয়লেট, পশু আশ্রয়ের জন্য পৃথক শেডসহ অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। 

    এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইচ্ছেমতো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শিডিউলে মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহারের কথা থাকলেও বাস্তবে তা মানা হচ্ছে না। নাম ও নম্বর ছাড়া ছোট আকারের নিম্নমানের ইট-বালু, কংক্রিট ব্যবহার করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে ছাদ ঢালাইসহ একটি ছাদ তিনবারেও ঢালাই করা হয়েছে। তাছাড়া দুই পাশে পুরুত্ব ঠিক রেখে কৌশলে মাঝখানে ঢালাইয়ে পাথর কম দেওয়া হয়েছে। ১০০ কিংকর পরিমাণের ওপিসি সিমেন্টের পরিবর্তে ৭৫ কিংকর মানের লোকাল সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, বালু আনা হয়েছে স্থানীয় উৎস থেকে, যা ছিল ময়লা ও কাদাযুক্ত। গত সরকারের পতনের পর কাজের মান নিয়ে অভিযোগ তুলে এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

    পিতলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফাজ জানায়, আমি দুই বছর ধরে এই স্কুলে আসি। দেয়ালে হাত দিলে প্লাস্টার উঠে আসে। ভেতরে ফাটলও ধরেছে।

    হোসেনপুর উপজেলার সিদলা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়ম না মেনে নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করছে। দুই ও তিন নম্বর ইট দিয়ে বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এমনকি নমুনা সংরক্ষণের নিয়মও মানা হয়নি। 

    পিতলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, নির্মাণকাজে কিউরিংয়ের অভাব ছিল। কলাম এবং বিমে ফাটল দেখা দিলে সিলার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কাজ চলমান আছে, বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।

    এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইসতিয়াক হোসাইন উজ্জ্বল বলেন, ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দের পিতলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে আমাদের একটা বন্যা আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের দিকে। নির্মাণকাল ছিল ১৮ মাস, সময় বৃদ্ধি করা হয়েছে। এখন ফিনিশিং পর্যায়ের কাজ চলছে। প্রায় ৭০ শতাংশ বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। আমাদের দৃষ্টিতে কাজ মোটামুটি ৮০ শতাংশর ওপরে কাজ হয়েছে। আমরা ইউএনও মহোদয়সহ সাইট পরিদর্শন করেছি। কিছু হেয়ার ক্র্যাক ছিল, তবে মেজর কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। প্লাস্টার খারাপ হওয়ায় নতুন করে কাজ করতে বলা হয়েছে।

    অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাহিদ ইভা বলেন, আমরা পরিদর্শন করে নিম্নমানের প্লাস্টার ও রঙের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। প্লাস্টার যেখানে খুলে খুলে পড়ছে আমরা তা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভালো মানের বালু এবং সিমেন্ট ব্যবহার করতে হবে। টাইলসের কাজ এক রুমে করা হয়েছে, বাকি রুমগুলোতে ভালোভাবে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নতুনভাবে মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ