শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • গাজীপুরে শাপলা তুলতে গিয়ে বিলে ডুবে দুই বন্ধুর করুণ মৃত্যু গুলশানে চাঁদা দাবির ঘটনায় আরও এক ছাত্রনেতা গ্রেফতার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন ২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য বড় ধাক্কা আসতে পারে শাহবাগে জুলাই সনদ দাবিতে দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি, যান চলাচল বন্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি কূটনৈতিক বিজয়: প্রধান উপদেষ্টা রাজধানীতে ‘গোপন বৈঠক’: নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ২২ জন গ্রেপ্তার পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের কড়া বার্তা সংসদের উচ্চকক্ষ ১০০ আসনের, সদস্য মনোনয়ন হবে আনুপাতিক হারে পলিথিন ও শব্দ দূষণ রোধে জরিমানা, জব্দ ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন
  • মব সহিংসতা ও বাড়ছে অজ্ঞাতনামা লাশ: এমএসএফ

    মব সহিংসতা ও বাড়ছে অজ্ঞাতনামা লাশ: এমএসএফ
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে দেশে ‘মব সহিংসতা’ বা গণপিটুনির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। একইসঙ্গে বেড়েছে অজ্ঞাতপরিচয় লাশের সংখ্যা, যা জনমনে ভীতির পরিবেশ তৈরি করছে।

    বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জুলাই মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

    প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময়কালে জাতীয় দৈনিকগুলোর প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

    এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিস্ক্রিয়তার ফলে এক শ্রেণির নাগরিক নিজ হাতে আইনকে হাতে তুলে আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছে, ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে মব সহিংসতা বা গণপিটুনির ঘটনা ঘটে চলেছে এবং শিকার হচ্ছেন সমাজের উচ্চ শ্রেণি থেকে নিম্ন শ্রেণির জনতা। নাগরিকদের জীবনে আতংক ও নিরাপত্তহীনতা তৈরি করা অবশ্যই মানবাধিকারের পরিপস্থি।’

    এতে বলা হয়, ‘মব সন্ত্রাস বা গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা মানবিক মর্যাদায় আঘাত করা অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ যা বিচারবর্হিভূত কর্মকাণ্ড হিসেবেই গণ্য করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি আইনকে নিজ হাতে তুলে নিয়ে নির্যাতন বা গণপিটুনির মতো ঘটনা ঘটিয়ে গুরুতর আহত করাও অবশ্যই ফৌজদারি অপরাধ। এ ক্ষেত্রে গণপিটুনির সাথে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী তথা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।’

    গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ মাসে অন্তত ৫১টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১৬ জন নিহত ও ৫৩ জন গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। গণপিটুনির শিকার ৩০ জনকে আহতাবস্থায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। গণপিটুনিতে নিহতের মধ্যে ২ জন ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ১ জন সন্দেজনক চুরির অভিযোগে, ১ জনকে খুনের অভিযোগে, ৭ জনকে চুরির অভিযোগে, ৩ জনকে মাদক ব্যবসার অভিযোগে, ১ জনকে বিএনপি কার্যালয়ের ভাড়া চাইতে গেলে মব সৃষ্টি করে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ও ১ জনকে রাজনৈতিক কারণে হত্যা করা হয়। 

    প্রতিবদেন বলছে, এ ছাড়া হত্যার অভিযোগে ১জন, ৩ জন ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে, ৩ জন যৌন হয়রানির অভিযোগে, ৪ জন ছিনতাইয়ের অভিযোগে, ৭ জনকে নিষিদ্ধ লীগের নেতাকর্মী হওয়ার অভিযোগে, ১০  জন ডাকাতির অভিযোগে এবং সন্দেহজনক চুরি, চাঁদাবাজি, কটূক্তি, প্রতারণা, অপহরণ এ ধরনের অপরাধজনিত কারণে ১৯ জনকে গণপিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।

    এমএসএফ মনে করে, আইন অবজ্ঞা করে মব সহিংসতা তৈরি করে সমাজে নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করে এক ভয়াবহ পরিবেশ তৈরিতে জড়িত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

    এমএসএফের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে একই ধারাবাহিকতায় অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের নেতিবাচক প্রভাব জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সকলের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইন শৃঙ্খলারক্ষারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি করছে।

    গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ৮ জন শিশু, ১ জন কিশোর, ১৩ জন নারী ও ২৯ জন পুরুষ, মোট ৫১ টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে যা অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ। অল্প সংখ্যক ঘটনা ছাড়া সব কয়টি লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ৪৯ জন। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেল লাইনের পাশে, ফসলী জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্প সংখ্যক মৃতদেহ গলা কাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে কিশোর রয়েছে  ১ জন, ২০-৩০ বয়সী ৮ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী, ৩১-৪০ বয়সী ১৮ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী, ৪১-৫০ বয়সী ২ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ, ৫০ বয়সের ঊর্ধ্বে ৩ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ রয়েছে এবং ১ টি অজ্ঞাত নামা লাশের  বয়স নির্ধারণ করা যায়নি।

    এমএসএফ মনে করে, শুধু উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা যত ক্ষমতাবানই হোক, এ সব অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

    বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা সেনা অভিযানকালে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক গুলির একটি ঘটনায় ২জন নিহত ও অপর ১জনকে আটক করা হয়েছে। খুলনা নগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছদ্মবেশে সাদা পোশাক পরা কিছু ব্যক্তি সুশান্ত কুমার মজুমদার নামের একজনকে জোর করে একটি ট্রলারে তুলে নেয় বলে জানানো হয় এতে।

    এ ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে আসামির মৃত্যুর বিষয়টি অনাকাঙ্খিত ও অগ্রহণযোগ্য। যা জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। এমএসএফ মনে করে, প্রতিটি হেফাজতে মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক।

    জুলাই মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্যাতনে একজনের মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমএসএফ মনে করে, এ ধরনের প্রতিটি মৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা উচিত।  জুলাই মাসে আতঙ্কে পালাতে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ধাওয়া খেয়ে মৃত্যুর বিষয়টি অনাকাঙ্খিত ও অগ্রহণযোগ্য।

    এমএসএফ জানিয়েছে, জুলাই  মাসে কারা হেফাজতে মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল ৫। এ মাসে ৪ জন কয়েদি ও ৬ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।  গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এমএসএফ। এছাড়া উদ্বেগ জানানো হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সংঘাতে ঘটা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়েও।

    সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লঙ্ঘন নিয়ে এমএসএফ বলছে, জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ১৯টি ঘটনায় ৩০ জন সাংবাদিক নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

    মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, নিবর্তনমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের উদ্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও আইনটি এখন পর্যন্ত বাতিল হয়নি, বরং এ আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার অব্যহত রয়েছে।

    সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংখ্যালঘুদের জীবনমান, সহবস্থান, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তায় সরকার ও প্রশাসনের দ্রুত ও নিরপেক্ষ পদক্ষেপের অভাবে তাদের ওপর সহিংসতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। যা সংবিধানের মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্রের মূলনীতির পরিপন্থী।

    গণমাধ্যমসূত্র ও এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ৮টি ঘটনা ঘটেছে। এ সকল ঘটনার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ২টি, হেনস্তা করার ১টি, প্রতিমা ভাঙচুরের ২টি, জমি দখলের ঘটনা ১টি এবং ১টি ঘটনায় কটূক্তির অভিযোগে কিশোরকে গ্রেপ্তারসহ ১৫টি বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। অপরদিকে জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।

    সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না বরং ধারাবহিকভাবে অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছে এমএসএফ।

    নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা নিয়ে এমএসএফ বলছে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতারোধে দেশে যথেষ্ট কঠোর আইন থাকা সত্বেও অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ও দৃশ্যমান ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। ফলে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার জায়গাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। নারীরা শিক্ষাঙ্গনে, বাসে, ট্রেনে, অটোবাইকে এমনকি নিজ ঘরে ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। যা কখনই কাম্য হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ দায়িত্ব পালন না করার কারণে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা একই ধারাবাহিকতায় ঘটেই চলেছে। যা নাগরিক জীবনে প্রশ্নাতীতভাবে সমালোচনা ও উদ্বেগ হিসেবে দেখা দিয়েছে।

    এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে ৩৫২টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা গত মাসের তুলনায় ১২টি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৫৬টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৮টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৭টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫ জন প্রতিবন্ধী কিশোরী ও নারী।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ

    আরও পড়ুন