কুবির প্রধান ফটকে দেয়াল লিখন ঘিরে সমালোচনার ঝড়


কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) প্রধান ফটকে ‘কুকসু চাই’ এই দেয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ (কুকসু) প্রতিষ্ঠার দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে এ লেখা অঙ্কন করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ২ টার দিকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাফ ভুইঁয়া এবং ফার্মেসী বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম ভূঁইয়া রংয়ের স্প্রে নিয়ে মূল ফটক ও রাস্তায় 'কুকসু চাই' শীর্ষক লিখা লিখেছেন।
এতে অনেক শিক্ষার্থী কুকসু'র প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা স্বীকার করলেও, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সৌন্দর্য নষ্ট করে এভাবে দেয়াল লিখন করাকে সমালোচনার চোখে দেখছেন। তাদের দাবি, 'দাবি ন্যায্য হলেও প্রকাশের মাধ্যমটি ভেবেচিন্তে হওয়া উচিত ছিল।'
এ ব্যাপারে মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ রাসেল চৌধুরী বলেন, 'কুকসু আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থীদেরই দাবী দাওয়া। কিন্তু যারা মূল ফটকের সৌন্দর্য বিনষ্ট করে 'কুকুসু চাই' লিখেছে তাদের কাছ থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ভালো কিছু আশা করতে পারে না। তারা কখনোই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের উন্নয়নের অংশীদার হতে পারবে না বরং আরো ক্ষতির কারণ হবে। যারা এই ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট করতে চাইবে আমরা তাদের কঠোরভাবে প্রতিহত করব।'
ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান হৃদয় বলেন, 'কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নান্দনিক স্থাপনা হচ্ছে মেইন গেইট। কিন্তু এই গেইটের দেয়ালে এরকম 'কুকসু চাই' লিখে সৌন্দর্য নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। কুকসু চাওয়া একটা যৌক্তিক দাবি। তাই বলে এইভাবে সৌন্দর্য নষ্ট করে না। কুবি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে যারা এই জঘন্য কাজ করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার।'
আইসিটি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার মীম বলেন, 'কুকসু নির্বাচনের দাবি তুলে স্টুডেন্টসরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করছে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, সম্মিলিত আন্দোলনের জন্ম দিচ্ছে, সবই ঠিক আছে। কিন্তু একটা পাবলিক ভার্সিটির দেয়ালে এভাবে লিখালিখি করে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। এর কারণে বিভিন্ন স্টুডেন্টদের মধ্যে বিভিন্ন মতবিরোধ আসবে, এমনকি প্রশাসন থেকে ও চাপ সৃষ্টি হতে পারে এই দেয়ালে লিখার জন্য।'
ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের এমবিএ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এমরান হোসেন বলেন, 'কুকসু নির্বাচন প্রশাসনের কাছে আমাদের সকল রানিং শিক্ষার্থীদের দাবি ও চাওয়া। কিন্তু 'কুকসু চাই' লিখে পুরো মেইন গেইটের সৌন্দর্য নষ্ট করার অধিকার আপনাকে কে দিছে? ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বিনষ্ট করার অধিকার কারো নেই। স্বার্থান্বেষী ও লোক দেখানো এমন জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রাখলাম। প্রশাসন এ ব্যাপারে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না পারলে আমরা শিক্ষার্থীরা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো।'
ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সৌন্দর্য নষ্ট করে এমন লেখার কারণ জানতে চাইলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরাফ ভুঁইয়া বলেন, 'আমাদের দাবিটি শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক দাবি এটি কোনো ব্যক্তিগত দাবি নয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমরা এটি করেছি। এটি আমরা অস্থায়ীভাবে করেছি এবং আগামীকাল মুছে ফেলব। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের অবগত করার উদ্দেশ্যেই এটি করা হয়েছে। যেহেতু এটি রং বা স্থায়ী পোস্টার নয়, বরং অস্থায়ীভাবে করা হয়েছে তাই আমরা আগামীকাল মুছে ফেলব। ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলোতে দাবি-দাওয়া লেখা হয়; তবে আমরা যেহেতু অস্থায়ীভাবে করছি, সৌন্দর্যের কোনো ক্ষতি হবে না।'
নাঈম ভুঁইয়া বলেন, 'আমরা লিখেছি মূলত কুকসু বিষয়ক দাবিটিকে সর্বজনীনভাবে উপস্থাপন করার জন্য। তবে আমাদের মূল গেটে লেখাটি করা ঠিক হয়নি। আমাদের উচিত ছিল আশপাশের দেয়ালে লেখা। বিষয়টার জন্য আমরা দুঃখিত। এসব লেখা অস্থায়ীভাবে করা হয়েছে; এমনকি বৃষ্টি হলেও তা মুছে যাবে। আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে আজ রাতের মধ্যেই সেগুলো মুছে ফেলার ব্যবস্থা করব।
