ভুট্টার খোসা থেকে শুরু, এখন বিশ্ববাজারে জায়গা করে নিচ্ছে পুতুল


যা সাধারণত রান্নাঘরের বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, সেই ভুট্টার খোসা আর সিল্ক (ভুট্টার চুলের মতো আঁশ) থেকেই দারুণ সব শিল্পকর্ম তৈরি করছেন ভারতের সেনাপতির বাসিন্দা নেলি চাচেইয়া। পেশায় একজন ফুল বিক্রেতা হলেও, তাঁর শিল্পচিন্তা ছড়িয়ে পড়েছে পরিবেশবান্ধব সৃজনশীলতায়।
দোকানে কাজ করার ফাঁকে একদিন রান্নাঘরের বর্জ্য খেয়াল করেন তিনি। তখনই ভাবনায় আসে—এই খোসা ও আঁশের ভেতরেও আছে সৌন্দর্য, আছে সম্ভাবনা। সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর এক ভিন্নধর্মী যাত্রা—ভুট্টার খোসা দিয়ে হাতে তৈরি পুতুল বানানো।
নেলির তৈরি এই পুতুলগুলো শুধু দেখতে দৃষ্টিনন্দনই নয়, এগুলো পুরোপুরি পচনশীল ও পরিবেশবান্ধব। কোনো রকম প্লাস্টিক বা কেমিক্যাল ছাড়াই তৈরি হওয়ায় এগুলো পরিবেশের জন্যও নিরাপদ।
স্থানীয় হাটবাজার ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এখন বিক্রি হচ্ছে তাঁর তৈরি এই অনন্য শিল্প। পাশাপাশি অনেকেই প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন তাঁর কাছে। নেলি চাচেইয়ার এই উদ্যোগ শুধু শিল্প নয়, এক ধরনের সবুজ বিপ্লবও।
প্রথম পুতুলটি ছিল নেলি চাচেইয়ার জন্য এক ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। শুকনো ভুট্টার খোসা দিয়ে তৈরি করলেন পুতুলের শরীর, ভুট্টার সিল্ক দিয়ে করলেন কোমল চুল, আর পাপড়ি দিয়ে সাজালেন পোশাক। মুখের ভাব তিনি নিজেই আঁকলেন। তখন তিনি ভাবতেই পারেননি, এই ছোট্ট সৃষ্টি তার জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তনের সূচনা করবে।
প্রথম দিকে ফুলের দোকানে আসা অতিথিরা পুতুলগুলো দেখে বিস্মিত হতেন। ভাবতেন, এগুলো হয়তো কোনো হাতে তৈরি হস্তশিল্পের নমুনা। কিন্তু ধীরে ধীরে পুতুলগুলোর প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেলো, আর কাস্টম অর্ডার নেওয়া শুরু হলো। নেলির এই উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে আশপাশের নারীরাও এই কাজে অংশ নিতে শুরু করেছেন।
এখন নেলির পুতুল তৈরির কাজ চলছে তার ছোট্ট স্টুডিও থেকে। কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই নিজেই শিখেছেন কিভাবে প্রাকৃতিক উপকরণগুলো পরিষ্কার, শুকিয়ে, রঙ দিয়ে ব্যবহার উপযোগী করা যায়। পুতুলের জন্য তিনি ব্যবহার করেন নরম প্যাস্টেল শেডের রং, সাজসজ্জায় ফুল, পাতা, বীজসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক উপকরণ।
একটি পুতুল তৈরি করতে কয়েকদিন সময় লাগে। প্রথমে সব উপকরণ ধুয়ে রোদে শুকানো হয়। তারপর ভুট্টার খোসা দিয়ে পুতুলের শরীর গঠন করা হয়, সিল্ক দিয়ে চুল তৈরি হয় এবং শুকনো ফুল দিয়ে স্কার্ট বা অলংকার সজ্জিত করা হয়। শেষমেশ মুখে রঙ দিয়ে প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা হয়।
এই পুতুল শুধু শিল্পকর্ম নয়, এটি পরিবেশবান্ধব একটি বার্তা বহন করে। এতে একটুও প্লাস্টিক ব্যবহার হয় না, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি, যা মাটিতে মিশে যেতে সক্ষম। তাই নেলির কাজ শুধুমাত্র শিল্প নয়, এটি একটি পরিবেশ সচেতন আন্দোলনও বটে।
এই উদ্যোগ এখন গ্রামীণ নারীদের জন্য অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার পথ খুলে দিচ্ছে। যদিও নেলি এখনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেননি, তবু নিজের শিখন অভিজ্ঞতা অন্য নারীদের শিখিয়ে যাচ্ছেন। এভাবে রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে আত্মনির্ভরতার এক নিঃশব্দ বিপ্লব রূপ নিয়েছে।
নেলির স্বপ্ন এই শিল্প উত্তর-পূর্ব ভারতের সব প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে। তার আশা, এই পুতুল টেকসই হস্তশিল্পের এক পরিচয় হয়ে উঠবে, যা পরিবেশ ও মানুষের জীবনে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
