ঘরমুখো মানুষের যাত্রা কি বরাবরই অনিশ্চিত থাকবে?


ঈদের আগে ঘরমুখো মানুষের জন্য রাজধানী ঢাকা পরিণত হয় এক ভিন্ন রূপে—বিরাট প্রত্যাশা, অজস্র ভোগান্তি আর প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবস্থাপনার এক বিশৃঙ্খল চিত্রে। গাবতলী বাস টার্মিনালের আজকের চিত্র যেন সেই পুরোনো ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি। হাজারো মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাচ্ছেন না, কেউ কেউ বাধ্য হচ্ছেন অতিরিক্ত ভাড়া গুনে ট্রাক, পিকআপ বা লোকাল বাসে ঝুঁকি নিয়ে রওনা দিতে।
এটা কেবল যাত্রীদের দুর্ভোগ নয়, এটা রাষ্ট্রীয় সমন্বয়ের এক করুণ চিত্র।
দেশের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এক বিশাল জনগোষ্ঠীর স্থানান্তর ঘটে। এটি নতুন কোনো বাস্তবতা নয়। তবুও কেনো বারবার একই ভোগান্তির পুনরাবৃত্তি? কেন সড়কপথে পর্যাপ্ত গাড়ি, টিকিট বা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ? কেনো অনলাইন টিকিট সিস্টেম অপ্রতুল? কোথায় পরিকল্পনা, কোথায় বাস্তবায়ন?
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, যানজট ও পশুবাহী ট্রাকের চাপে চলাচল প্রায় অচল। ঈদ সামনে রেখে সড়কে নিয়ন্ত্রণহীনতা এবং যানবাহনের সংকট যেন একে অন্যকে বাড়িয়ে তোলে। এর মাঝে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও প্রচেষ্টার পরও হিমশিম খাচ্ছে, কারণ সংকটটা নীতিগত পরিকল্পনার ঘাটতির।
অবাক করা ব্যাপার হলো, এ পরিস্থিতিতে কিছু পরিবহন মালিক স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া নিচ্ছেন। ভাড়া নির্ধারণ, নিয়মিত গাড়ির সংখ্যা নিশ্চিতকরণ ও পর্যাপ্ত বিকল্প পরিবহন না থাকা মানেই তো এই দুর্দশা পূর্বপরিকল্পিতভাবেই আসবে।
আমরা কী চিরকালই ঈদের আগমুহূর্তে ঘরমুখো মানুষকে অমানবিকতার মুখে ঠেলে দেবো? কোথায় সেই জনগণের জন্য প্রতিশ্রুত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’?
এই ব্যর্থতা কেবল পরিবহন খাতের নয়, এটা পুরো নীতিনির্ধারক এবং ব্যবস্থাপনা কাঠামোর ব্যর্থতা।
এখনই সময় জরুরি পদক্ষেপের। আগাম পরিকল্পনা ও পর্যাপ্ত যানবাহন মজুত, অতিরিক্ত ভাড়া প্রতিরোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, যাত্রীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—পরিবহন খাতকে দীর্ঘমেয়াদী সংস্কার।
যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ তাদের ঘরে ফেরার মৌলিক অধিকারটুকু সম্মানের সঙ্গে অর্জন করতে না পারবে, ততদিন এই অস্থিরতা আমাদের ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে।
