মশা মারা সহজ, কিন্তু অভদ্রতা দমন কতটা সম্ভব?

ক্রিকেটে ভদ্রতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ক্রীড়াসুলভ মনোভাবই এই খেলার মূল সৌন্দর্য। জয়-পরাজয় খেলারই অংশ, কিন্তু খেলোয়াড়দের পারস্পরিক সম্মান ও স্পোর্টসম্যানশিপই ক্রিকেটকে করে তোলে ‘ভদ্রলোকের খেলা’। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোতে সেই ঐতিহ্যে পড়েছে রাজনীতির কালো ছায়া।
গতকাল (রবিবার) কলম্বোয় নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের ম্যাচে দুই প্রতিবেশী দেশের লড়াইয়ে ফের দেখা গেল সেই উত্তেজনার পুনরাবৃত্তি। ম্যাচে এক পর্যায়ে ভারতীয় বোলার ও পাকিস্তানি ব্যাটারের মধ্যে তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটে, যা দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, “আমরা ক্রিকেট খেলতে এসেছি, রাজনীতি করতে নয়। মাঠের ভেতরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, কিন্তু সেটা যেন কখনও অসম্মান বা বিদ্বেষে পরিণত না হয়।”

অন্যদিকে পাকিস্তানের অধিনায়কও শান্তিপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “খেলার মাঠ বন্ধুত্বের জায়গা হওয়া উচিত, শত্রুতা নয়।”
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান ম্যাচগুলোয় খেলোয়াড়দের ওপর বাইরের চাপ ও রাজনৈতিক পরিবেশের প্রভাব বেড়ে গেছে। তারা মনে করেন, খেলোয়াড়দের মানসিক প্রশিক্ষণ ও মাঠে পারস্পরিক সম্মান রক্ষা করার বিষয়ে আরও গুরুত্ব দেওয়া দরকার, যাতে ক্রিকেট তার আসল মর্যাদা—ভদ্রতার খেলা—অক্ষুণ্ণ রাখতে পারে।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে বসেছিল ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। পুরুষদের এশিয়া কাপের পর নারীদের বিশ্বকাপেও ভারতের ক্রিকেটাররা হাত মেলাননি। এদিকে গতকালের খেলায় ২৮ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ১২২ রানে ব্যাট করছিল ভারত। সে সময় ঝাঁক ঝাঁক মশার আক্রমণে খেলা থমকে যায়। ক্রিজে থাকা জেমিমাহ রদ্রিগেজ ও হার্লিন দেওল দুজনেই নাজেহাল হয়ে পড়েন।
পাকিস্তানের ক্রিকেটাররাও তখন সমস্যায় পড়লেও মজার ছলে পরিস্থিতি সামাল দিতে দেখা যায় তাদের। স্পিনার নাশরা সান্ধু আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বললে মাঠে আনা হয় মশার স্প্রে। প্রথম দফায় মিনিট কয়েক খেলা বন্ধ থাকার পর আবার ৩৪তম ওভারে শুরু হয় মশার দ্বিতীয় হানা। এবার পেশাদার কীটনাশক ছেটানো কর্মীদের মাঠে এনে পুরো আউটফিল্ডে স্প্রে করা হয়। দুই দলের ক্রিকেটাররা তখন বাইরে অপেক্ষা করেন প্রায় ১৫ মিনিট। খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ভারতের সংগ্রহ ছিল ৩৪ ওভারে ৪ উইকেটে ১৫৪ রান।
তবে খেলার বাইরেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে ম্যাচটি। ক্রিকেটকে 'ভদ্রলোকের খেলা' বলা হলেও, মাঠে দেখা গেছে তার উলটো চিত্র। পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানান ভারতীয় অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরসহ তার সতীর্থরা। ম্যাচ শেষে যে সৌজন্য বিনিময়ের দৃশ্য ক্রিকেট সংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে, তা যেন হাওয়া হয়ে গেল কলম্বোর গরম হাওয়ায়।

পুরুষদের এশিয়া কাপেও এমন আচরণে সমালোচনায় পড়েছিল ভারত। রাজনৈতিক টানাপড়েনের কারণ দেখিয়ে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন সূর্যকুমার যাদবরা। নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে একই আচরণের পুনরাবৃত্তি কেবল হতাশাই বাড়িয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। কলম্বোর মাঠে মশার উপদ্রব সামাল দেওয়া গেল স্প্রে করে, কিন্তু ক্রিকেটের মাঠে ছড়িয়ে পড়া এই অহংকার ও অমার্জিততার ধোঁয়া মুছবে কীসে-এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ভক্তদের মনে।