শ্যামনগরে বিএনপির দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন


শ্যামনগর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে বিকাল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আশেক ইলাহী মুন্না।
গতকাল শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও তার স্ত্রী একটা সংবাদ সম্মেলন করেছে। যাহা ইতিমধ্যে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আপনাদের কাছে সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করা হয়েছে। যার ফলে দলের ও নেতৃবৃন্দের ভাবমূর্তি মারত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আপনারা সকলেই অবগত আছেন গত ২৫ জুলাই শ্যামনগর পৌর সভার ৯টি ওয়ার্ডের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলন সফল ভাবে সম্পন্ন করায় আমরা টিম প্রধান তাসকিন আহমেদকে প্রথম থেকেই সহযোগিতা করে আসছি। কিন্তু শেখ লিয়াকত আলী বাবু ও তার সমর্থকরা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রথম থেকেই অসহযোগিতা করে আসছিল। ঐ দিন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ১,৩,৫ ও ৯ নং ওয়ার্ডে নেতা নির্বাচিত হয়।
বাকী ২,৪,৬,৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে ভোট গ্রহন বিকাল ৩.০০ টায় শুরু হয়। ভোট শুরুতেই ৮নং ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় ভোটার নম্বর না মেলায় আজিবর রহমান আজিবর ও শামছুদ্দোহা টুটুলের মধ্যে বাদনুবাদ শুরু হয়। তখন টিম প্রধানের অনুরোধে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য এ্যাডভোকেট আশেক-ইলাহী-মুন্না নির্বাচন পরিচালনার বুথে যেয়ে দেখেন যে, ভোটার তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৫৩৮ জনের পরিবর্তে ৪১৬ জন আছে। তখন টিম প্রধানের সহি সম্বলিত ভোটার তালিকা সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সবুর খান নিয়ে আসলে নির্বাচন পরিচালনাকারীগন মিলাতে থাকে।
তখন শামছুদ্দোহা টুটুল লিয়াকত আলী বাবুকে সংবাদ দিলে লিয়াকত আলী বাবু, তার স্ত্রী শামসুন্নাহার লাকী ও তার জামাতা সাদেকুল ইসলাম তোহা নির্বাচন কক্ষে প্রবেশ করে বলে ১০০ ভুয়া ভোটার বানানো হয়েছে। তৎক্ষনাত তার সমর্থিত বাবু, মফিজুর, রাজ্জাক, রাইসুল ও তার জামাতা তোহা সহ ৮/১০ জন মিছিল সহকারে বলতে থাকে এই ভোট বন্ধ করতে হবে। তখন ৮নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মফিজুর সাথে রহমান মঞ্জু খা ও বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল গফফার খান এর সমর্থক দের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। তখন লিয়াকত আলী বাবুর জামাতা তোহা আব্দুল গফফার খান ঝুনুর ছেলে মোনাজাতের মাথায় স্বজোরে ঘুষি মারলে মোনাজাতের মাথা দেওয়ালের গায়ে লাগে ও সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
তখন মোনাজাতকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে সভাপতি ঝুনু খা, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মফু খা ও সাংগঠনিক সম্পাদক প্রার্থী শফিকুল কয়ালের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্রের বাহিরে উত্তেজিত হয়।
ঠিক সেই মুহুর্তে লিয়াকত আলী বাবু তার সমর্থক যুবলীগের সন্ত্রাসী বিএনপির সাবেক সভাপতি মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ স্যার, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান কবীর, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এ্যাড: আশেক-ইলাহী মুন্না, সাবেক যুব বিষয়ক সম্পাদক জহুরুল হক আপ্পু, যুবদলের আহবায়ক শফিকুল ইসলাম দুলু, সিনিয়র যুগা আহবায়ক নাজমুল হক, সাবেক কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ নূর ইলাহী লিটন, যুবদলের আহবায়কের ছেলে ছাত্রনেতা রোহান ও অসংখ্য নেতাকর্মী ও বিএনপির মিছিল ও প্রোগ্রামে হামলাকারী কুখ্যাত সন্ত্রাসী হাফিজুরের খালু এবং বর্তমান তার অবৈধ সম্পদ দেখভালকারী ব্যক্তি লিয়াকত আলী বাবুর সঙ্গী সেজে তার সহযোগিতায় বর্তমান শ্যামনগর থানার কর্মকর্তাদের সাথে সু-সম্পর্ক স্থাপনকারী আনোয়ার সাদাত মিঠু সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে গোলযোগে জড়িয়ে পড়ে। সেই সময় বিএনপির নিবেদিত প্রাণ ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের দোসর মিঠুকে মারধর করে সেই ভিডিওর চিত্রটা যমুনা টিভির মাধ্যমে সকলে অবগত হয়েছেন।
লিয়াকত আলী বাবুর জামাতা কোন দল করেন না, মিঠু তার কর্মী। আমাদের জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন তার জামাতা যদি কোন দল না করে তাহলে সে কেন বিএনপির নির্বাচন কেন্দ্রে এসে মারামারিতে জড়ালো। আর তার বেয়াই নাকি ড্যাব নেতা তার বেয়াই ডা: নজরুল ইসলাম ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শ্যামনগর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা হিসাবে একটানা ৯ বছর কিভাবে দায়িত্ব পালন করলো। প্রকৃত পক্ষের তার বেয়াই আওয়ামী লীগের সংগঠন স্বাচিপের সমর্থক থাকায় আওয়ামী লীগের আমলে স্বাচ্ছন্দে শ্যামনগর হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করেছেন।
আসলে তিনি আওয়ামী লীগ করেন। তার প্রমান স্বরুপ আওয়ামী লীগ প্রার্থী দোলনের জন্য উঠান বৈঠকের আয়োজন করে। ২০২১ সালে ১৯ শে নভেম্বর হাম্মাদিয়া মাদ্রাসায় ছাত্রদল আহুত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির দোয়া অনুষ্ঠানে লিয়াকত আলী বাবু কুখ্যাত সন্ত্রাসী হাফিজুরের খালু মিঠুর মাধ্যমে টাকা দিয়ে ছাত্রদলের প্রোগ্রামে হামলা চালিয়ে মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ, আশেক-ইলাহী মুন্না, আব্দুল মতিন, প্রয়াত স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা জহুরুল এর উপর হামলা করে আহত করে।
এই হামলায় আশেক ইলামী মুন্নার জীবন সংকটাপনপন্ন ছিল এবং তার ব্যবহৃত মটর সাইকেল, মোবাইল, ঘড়ি, কেড়ে নিয়েছিল, যাহা আজও উদ্ধার হয় নাই। সেই সময় আশেক-ইলাহী মুন্না কোর্টে মামলা করলে সকল আমানত সহ কোর্ট থানাকে এজাহার হিসাবে গন্য করার অর্ডার দিলেও পরবর্তীতে থানা পুলিশের সহায়তায় সন্ত্রাসী হাফিজুর ও তার গুন্ডা বাহিনীরা সকল আলামত জ্বালাইয়া নষ্ট করে দেয়।
আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানতে চাই আওয়ামী লীগের দোসর মিঠু কিসের জন্য বিএনপির নির্বাচন স্থলে আসলো এবং লিয়াকত আলী কেনই বা মিঠুকে নিয়ে নেতাকর্মীদের সাথে মারামারিতে জড়ালো। শেখ লিয়াকত আলী বাবুর স্ত্রী দাবী করেছেন তার বেয়াইকে মাস্টার আব্দুল ওয়াহেদ কলিজা ছিড়ে নিতে চেয়েছে, প্রকৃত পক্ষে তার বেয়াই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী ডাঃ নজরুল ইসলাম স্কুলের অফিস রুমে জেলা নেতৃবৃন্দের সাথে বসে থাকা আলহাজ্ব আব্দুল ওয়াহেদ স্যারকে সন্ত্রাসী বলে কুটক্তি করলে বাদনুবাদের সৃষ্টি হয়।
ভোটার লিষ্ট ত্রুটি জনিত কারনে ৮নং ওয়ার্ডের ভোট গ্রহন স্থগিত করা হয়। বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত ৪টি ওয়ার্ডে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ঘোষিত ফলাফলে শেখ লিয়াকত আলী বাবুর সমর্থিত প্রার্থীরা শোচনীয় পরাজয় বরন করলে উক্ত সৃষ্ট গোলযোগের দায়ভার অন্য লোকের উপর চাপাতে চায়।
আব্দুল ওয়াহেদ স্যার একজন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, সাবেক চেয়ারম্যান সহ বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত আছেন, তিনি বিএনপির গোড়াপত্তন থেকে বিএনপির রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত এবং এ্যাড: আশেক-ইলাহী মুন্না ছাত্র জীবন থেকে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। তাদের জনপ্রিয়তায় এবং গঠনতান্ত্রিক কার্যকলাপে ঈর্ষানিত হয়ে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি'র জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য মাস্টার আবদুল ওয়াহেদ, প্রভাষক আবু সাঈদ, ডি এম আব্দুস সামাদ, আবুল কালাম মোড়ল, ও হিদুজ্জামান শহীদ। অপরদিকে গত ২৬জুলাই সন্ধ্যায় শেখ লিয়াকত আলী বাবুর বাসায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শেখ লিয়াকত আলী বাবু।
লিখিত বক্তব্য বলেন দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত। ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে যুবদল এবং উপজেলা বিএনপির রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। সুসময়ের পাশাপাশি চরম দুঃসময়েও দলের সাথে এতটুকু বেঈমানী করিনি। সেই বিএনপি'র একটি বিপদগামী পক্ষের দ্বারা আজ আমি দারুনভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত।
গতকাল ২৫ জুলাই শ্যামনগর পৌর বিএনপি'র কাউন্সিল কে ঘিরে এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বিগত হ্যাশেস সরকারের সুবিধা ভোগিসহ বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের পাশাপাশি অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাউন্সিলর বানানোর প্রতিবাদ করায় আমি সহ আমার পরিবার এবং কর্মীর সমর্থকদের উপর সন্ত্রাসী স্টাইলে হামলা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি'র বর্তমান কমিটির সদস্য আব্দুল ওয়াহেদ এবং জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ন সম্পাদক বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য আশেক এলাহী মুন্নার ইন্ধনে হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমার বেয়াই ড্যাব নেতা ডাক্তার নজরুল ইসলাম, আমার জামাতা সাদিকুল ইসলাম তোহা সহ বিএনপির অনেক নেতাকর্মী হামলার শিকার হয়েছে।
তিনি ওই দুই নেতার পাশাপাশি তাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কেন্দ্র নেতৃবৃন্দ সহ বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ন্যায় সঙ্গত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দৈএনকে/ জে. আ
