পানিশূন্য হতে চলেছে কাবুল, ইতিহাসে নজিরবিহীন শঙ্কা


আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বর্তমানে ভয়াবহ পানিসংকটের মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা মার্সি কর্পসের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত হ্রাস পাওয়া পানির উৎস ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে কাবুল বিশ্বের প্রথম রাজধানী শহর হতে পারে, যেখানে সম্পূর্ণভাবে পানি ফুরিয়ে যেতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর গড়ে এক মিটার করে নিচে নেমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা চাপ এবং দুর্বল অবকাঠামো মিলে এই সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হয়, তাহলে কাবুলের লাখো বাসিন্দা জীবনরক্ষাকারী পানির জন্য ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে।
একসময় কাবুলের জনসংখ্যা ছিল ২০ লাখের নিচে। ২০০১ সালে তালেবান পতনের পর শহরে মানুষের ঢল নামে, কিন্তু সে অনুযায়ী জল ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। শহরটি প্রায় পুরোপুরি ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। তবে জলসম্পদের অব্যবস্থাপনা, অতিরিক্ত উত্তোলন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত দশ বছরে পানির স্তর ৩০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে।
মার্সি কর্পসের মতে, প্রতিবছর কাবুল ৪৪ মিলিয়ন কিউবিক মিটার অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করে, যা প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় পূর্ণ হয় না। এর ফলে শহরের এক-তৃতীয়াংশ নলকূপ শুকিয়ে গেছে।
২৮ বছর বয়সী ইয়াসিন নিজের পরিবারকে পানি জোগাতে বাধ্য হয়ে ১২০ মিটার গভীর কূপ খনন করেন। এতে খরচ হয় প্রায় ৪০,০০০ আফগানি। কিন্তু যে পানি পাওয়া যায়, তা পান করার জন্য নিরাপদ নয়, কারণ ৮০% ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত।
দূষণের প্রধান কারণ হলো শহরজুড়ে টয়লেট পিট ও শিল্পবর্জ্য। অনেক পরিবার আজ বিশুদ্ধ পানি কিনে খেতে বাধ্য, অথবা বিশুদ্ধকরণ ছাড়াই অনিরাপদ পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
কাবুলে এখনকার চিত্র এমন যে ছোট ছোট শিশুরাও স্কুল বাদ দিয়ে পানি আনতে ব্যস্ত, মায়েরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে মজুত পানির খোঁজ করেন। তালেবানের শাসনে নারীদের একা চলাফেরার উপর বিধিনিষেধ থাকায় এটি আরও জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ পূর্বাভাস দিয়েছে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে কাবুলের ভূগর্ভস্থ পানি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশটি আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়। মানবিক সহায়তা মূলত এনজিওগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হলেও, ২০২৫ সালের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএইড সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ায় পানি ও স্যানিটেশন খাতে প্রয়োজনীয় ২৬৪ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ৮ মিলিয়ন ডলার বিতরণ হয়েছে।
মার্সি কর্পসের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মারিয়ানা ভন জান বলেন, “এটি শুধু পানি সংকট নয়, এটি একযোগে স্বাস্থ্য সংকট, মানবিক বিপর্যয় ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়।”
