কলম্বোয় আত্মবিশ্বাস ফেরাতে চায় বাংলাদেশ


কলম্বোর ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী হাসান মিরাজকে শুরুতেই চাপে ফেলার চেষ্টা করেন এক শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক। প্রশ্ন ছিল সরাসরি ও খানিকটা বিদ্রূপাত্মক—ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বর দলের সঙ্গে দশ নম্বর দলের কি আদৌ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে? সঙ্গে যোগ করেন আরেকটি কৌতূহল: অভিজ্ঞদের অবসরের পর সৃষ্ট শূন্যতা কীভাবে সামলাবে বাংলাদেশ?
সংবাদ সম্মেলনে এমন কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হলেও একটুও বিচলিত হননি টাইগারদের অধিনায়ক। শান্ত, আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সময়ের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে জানান, নতুন দল হিসেবে নিজেদের গুছিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে।
তবে বাস্তবতা হলো, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মঞ্চে খুব একটা সময় পাওয়া যায় না। এখানে প্রতিটি ম্যাচেই দলকে প্রমাণ করতে হয় নিজেদের সামর্থ্য। বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সেও দেখা যাচ্ছে সেই বাস্তবতার প্রতিফলন—২০২৩ বিশ্বকাপের পর থেকেই ধারাবাহিকতার অভাব, ব্যর্থতা, ও হতাশার ছায়া। এখনও পর্যন্ত নিজেদের স্থিতিশীল করতে পারেনি টাইগাররা, যার প্রভাব পড়েছে র্যাঙ্কিংয়েও। ওঠা-নামার এই যাত্রায় দলটি যেন নিজেদের পরিচয় খুঁজছে নতুন করে।
ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ে সাত নম্বর থেকে দশে নেমে এসেছে বাংলাদেশ। সেই ধাক্কা সামলাতে এবং ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন শুরু করতে চান নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই জয়ের ধারায় ফেরার প্রত্যাশা তাঁর। আজ কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সেই প্রত্যাশার পরীক্ষা।
বাংলাদেশ শেষ ওয়ানডে খেলেছে গত মার্চে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। দীর্ঘ তিন মাসের বেশি সময় ৫০ ওভারের ক্রিকেট না খেলায় ছন্দে কিছুটা ভাটা পড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা নিজেদের ঘরের মাঠে দুর্দান্ত ফর্মে আছে—এই বছর প্রেমাদাসায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়েছে তারা।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ঘরের মাঠের রেকর্ড আরও সমৃদ্ধ করতে চান তিনি। মিরাজও জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে চান, তবে তাঁর বক্তব্যে কিছুটা আবেগের ছাপ ছিল—এমনটাই মনে করছেন অনেকেই। তিনি বলেন, “মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক ভাইয়ের অবসরের পর স্বাভাবিকভাবেই শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেটা রাতারাতি পূরণ সম্ভব নয়, তবে বেশ কিছু তরুণ উঠে এসেছে। সাত-আট বছর ধরে যারা খেলছি, তাদের সেরাটা দেওয়ার সময় এসেছে।”
তাঁর ইঙ্গিত, মিডলঅর্ডারে অভিজ্ঞদের জায়গা এখন তাঁর ও লিটনের কাঁধে। সম্ভবত পাঁচ ও ছয় নম্বরে দেখা যেতে পারে এ দুজনকে। কারণ হিসেবে মিরাজ বলেন, “মুশফিক ও রিয়াদ ভাই যে পজিশনে ব্যাট করতেন, সেখান থেকে ইনিংস গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে অভিজ্ঞ কাউকে দরকার।”
তাদের মিডল অর্ডারে খেললে ওপেনিংয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে পারভেজ ইমন ও নাঈম শেখের মধ্যে। তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গী হিসেবে ইমনকেই এগিয়ে রাখছেন কোচরা। তিনে শান্ত, চারে হৃদয় খেলবেন বলেই ধরে নেওয়া যাচ্ছে। সপ্তম পজিশন এখনো চূড়ান্ত নয়।
দিন-রাতের ম্যাচ হওয়ায় বোলার নির্বাচনের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে পেস আক্রমণে তাসকিন আহমেদের সঙ্গী হিসেবে দুইজনকে বেছে নিতে হবে কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে। মিরাজ জানালেন, “টেস্ট সিরিজ শেষে সাদা বল নিয়ে কিছু অনুশীলন করেছি। শুরুটা ভালো করতে পারলে আত্মবিশ্বাস আসবে। এই সিরিজ আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০২৭ বিশ্বকাপে সরাসরি জায়গা করে নিতে হলে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আটে থাকতে হবে। এই সিরিজ থেকেই সে লড়াই শুরু।”
তবে প্রথম ম্যাচের আগে দুশ্চিন্তার খবরও আছে। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন আজকের ম্যাচে মাঠে নামতে না-ও পারেন।
