বিশেষ ট্রেন থেকে বঞ্চিত সৈয়দপুরের জনগণ


ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভিন্ন রুটে ১০টি স্পেশাল ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রেলওয়ের শহর হিসেবে খ্যাত সৈয়দপুর কিংবা নীলফামারী জেলার জন্য কোনো স্পেশাল ট্রেন বরাদ্দ করা হয়নি। ফলে প্রতি বছরের মতো এবারও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এ অঞ্চলের যাত্রীরা।
রেলওয়ের তথ্যমতে, ঈদ স্পেশাল ট্রেন চলবে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, দেওয়ানগঞ্জ, ঢাকা, কক্সবাজার, শোলাকিয়া, কিশোরগঞ্জ ও পার্বতীপুরসহ বিভিন্ন রুটে। কিন্তু চিলাহাটি কিংবা সৈয়দপুর হয়ে একটি ট্রেনও চলবে না।
স্থানীয়দের দাবি, অন্তত জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটের ট্রেনটি চিলাহাটি পর্যন্ত বাড়িয়ে দিলে হাজারো যাত্রীর উপকার হতো। ঈদের সময় সৈয়দপুর স্টেশন থেকে ঢাকা অভিমুখে প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৫০০ যাত্রী চলাচল করেন, আর ঈদের সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৫ হাজারে।
সৈয়দপুর স্টেশন থেকে বর্তমানে পাঁচটি আন্তঃনগর ও একটি মেইল ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে নীলসাগর এক্সপ্রেস ও চিলাহাটি এক্সপ্রেস ঢাকা রুটে চালিত হয়। ভৌগলিকভাবে সৈয়দপুর গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় আশেপাশের জেলার মানুষ এখান থেকেই টিকিট সংগ্রহ করে।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা অবস্থিত সৈয়দপুরে। ঈদে চলাচলকারী স্পেশাল ট্রেনগুলোর ১৪০টি কোচ এখান থেকেই মেরামত ও সরবরাহ করা হয়েছে। অথচ এখান থেকেই কোনো স্পেশাল ট্রেন নেই!
রোখসানা পারভীন নামে এক নারী যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করি। কিন্তু ঈদের সময় বিশেষ ট্রেন থেকে বঞ্চিত হই। এটি খুবই দুঃখজনক।”
রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নের কারখানা শাখার সম্পাদক শেখ রোবায়তুর রহমান বলেন, “আমরাই সারাদেশে চলাচলকারী ট্রেনের কোচ মেরামত করি, অথচ ঈদের সময় আমাদের এই অঞ্চলেই স্পেশাল ট্রেন থাকে না—এটা অবিচার।”
এ বিষয়ে সৈয়দপুর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল সরকার বলেন, “নীলফামারী ও আশপাশের জেলার মানুষ প্রতিবছর ঈদে ট্রেনের টিকিট না পেয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করে। রেল কর্তৃপক্ষের উচিত এই বৈষম্য দূর করা।”
সৈয়দপুর স্টেশন মাস্টার ওবাইদুল ইসলাম রতন জানান, “জয়দেবপুর-পার্বতীপুর স্পেশাল ট্রেনটি চিলাহাটি পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য আমরা একাধিকবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কর্ণপাত করেনি।”
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, প্রতিবারের মতো এবারও স্পেশাল ট্রেনের বঞ্চনার শিকার হয়েছে সৈয়দপুরবাসী। এতে একদিকে যাত্রীদের হয়রানি বাড়ছে, অন্যদিকে রেলওয়ের সম্ভাব্য আয়ও হারিয়ে যাচ্ছে।
