ঢাকার কসাই সংকটে ভরসা উত্তরাঞ্চল: ঈদে আসছে মৌসুমি কসাই দল


কোরবানির ঈদ সামনে রেখে রাজধানীতে মাংস বানানোর কসাই সংকট দূর করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন উত্তরাঞ্চলের পেশাদার ও মৌসুমি কসাইরা। প্রতিবছরের মতো এবারও রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় ছুটে আসবেন তারা।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধামশ্রেনী ইউনিয়নের পেশাদার কসাই বাবু মিয়া টানা ১৫ বছর ধরে কোরবানির ঈদে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় গরুর মাংস বানানোর কাজ করে আসছেন। এ বছরও ঈদের আগের দিন উলিপুর থেকে রওনা হবেন বলে জানান তিনি। তাঁর সঙ্গে আরও তিন-চারজন থাকবেন। দলবদ্ধভাবে এক দিনে ছয়-সাতটি গরুর কাজ করতে পারেন তারা। যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় জনপ্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা।
লালমনিরহাট শহরের আলোরুপা মোড়ের কসাই রাজু আহমেদও প্রতিবছর তিন-চারজন সঙ্গী নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট এলাকায় আত্মীয়ের বাসায় ওঠেন। ঈদের দিন গরু প্রতি হাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। দ্বিতীয় দিনেও কিছুটা আয় হয়, সব মিলিয়ে দুই দিনে জনপ্রতি ২০-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় সম্ভব হয় বলে জানান তিনি।
ঢাকায় কোরবানির সময় কসাইদের চাহিদা চরমে থাকে। জবাই করার মানুষ থাকলেও দক্ষভাবে মাংস বানানোর লোকের অভাব রয়ে যায়। ফলে, ঈদের দিন অনেকে জবাইয়ের পরও সন্ধ্যা পর্যন্ত মাংস ঘরে তুলতে পারেন না। এই চাহিদা পূরণেই এগিয়ে আসেন উত্তরাঞ্চলের পেশাদার ও মৌসুমি কসাইরা।
গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো অভিজাত এলাকায় গরুর দামের প্রতি হাজারে কসাইরা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পান। অন্যদিকে, সাধারণ এলাকায় এটি হয় প্রতি হাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। অনেক সময় গরুর আকার বুঝে চুক্তিতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায় একটি গরুর পুরো কাজ করা হয়। এ ছাড়াও মালিকেরা অনেক সময় খুশি হয়ে বকশিশ, মাংস ও যাতায়াত খরচও দেন।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মৌসুমি কসাই আজিজুর রহমান জানান, প্রতিবছর তাদের এলাকা থেকে অন্তত ৫০-৬০ জন কসাই দলবদ্ধভাবে রাজধানীতে আসেন। ধানমন্ডি এলাকায় তারা গরুর মাংস বানানোর কাজ করেন। গরুর আকার অনুযায়ী তারা আগেই মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে থাকেন।
সাব্বির আহমেদ, ঢাকার মিরপুর ১১ নম্বর এলাকার বাসিন্দা, জানান—প্রতি বছর ঈদের আগের রাতে ঠাকুরগাঁও থেকে চারজন পরিচিত মৌসুমি কসাই তার বাসায় আসেন। একেকজন গরুর কাজ শেষ করেন প্রায় দুই ঘণ্টায়। ঢাকার স্থানীয় কয়েকজন সহকারী হিসেবে কাজ করেন তাদের সঙ্গে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের দামোদরপুরের কসাই শাহিনুর ইসলাম জানান, বছরের বাকি সময় বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকলেও ঈদের দুই দিন তারা ঢাকায় গিয়ে মৌসুমি কসাই হিসেবে কাজ করেন। দীর্ঘদিন একই এলাকায় কাজ করায় নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক আগে থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সাবেক পেশাদার কসাই ও বর্তমানে ভ্যানচালক আব্দুর রশীদ জানান, ঢাকায় গিয়ে একদিনেই যে আয় সম্ভব, তা অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায় না। তাই প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে তিনি রাজধানীতে যান।
সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মোস্তফা সাব্বির বলেন, বছরের একটি দিনকে ঘিরে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ উপার্জনের বড় সুযোগ পান। এই আয় সংসার চালাতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা করে।
