চট্রগ্রামে নারী নেত্রীদের লাঞ্ছনার ঘটনায় গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট


চট্রগ্রামে নারী নেত্রীদের ওপর লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা।
কাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে খালাস দেয়ার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিতে হামলা এবং নারী নেত্রীদের ওপর লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এনি চৌধুরী।
এনি চৌধুরী বলেন, ‘গত কয়েকদিনে দেশের বিচারব্যবস্থা, গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর একের পর এক আঘাত এসেছে, যা উদ্বেগজনক ও লজ্জাজনক। যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এটিএম আজহারুল ইসলামকে ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে ২৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবির দফায় দফায় হামলা চালায়। পরদিন (২৮ মে) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে জোটের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। কিন্তু জামায়াত-শিবিরপন্থী একটি সংঘবদ্ধ দল সমাবেশে হামলা চালায়। সমাবেশে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা হয় ।
জোট নেত্রী আরও বলেন, ‘সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই “শাহবাগ বিরোধী ঐক্য” নামক একটি উস্কানিমূলক অনলাইন গোষ্ঠী হামলার মঞ্চ তৈরি করে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে, প্রেসক্লাব চত্বরে উপস্থিত জোটের কর্মীদের ওপর জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্ট একটি দল পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে আগুনে পোড়ানো হয়, নারী কর্মীদের অকথ্য গালিগালাজ, শারীরিক লাঞ্ছনা ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়।
তাদের এ হামলায় আহত হন অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী। এদের মধ্যে তিনজন গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গুরুতর আহতদের মধ্যে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি রিপা মজুমদার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাস এবং অর্থ সম্পাদক সুদীপ্ত গুহ।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হামলায় অংশ নেয় ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক আবরার হোসাইন রিয়াদ, জামায়াত নেতা আকাশ চৌধুরী, তৌকির, আসফারসহ আরও অনেকে। নারী নেত্রীদের আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার সময়ও একাধিকবার হামলা হয়।
আওয়ামী আমলে বিচার ব্যবস্থার প্রশ্নবিদ্ধতা উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জোট নেতারা এটিএম আজহারকে খালাস দেয়ার রায়ের তীব্র সমালোচনা করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিকে আওয়ামী লীগ দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে ত্রুটিপূর্ণ বিচার করেছিল। আজহারের খালাসে এ দাবি প্রহসনে পরিণত হয়েছে। গাজী এমএইচ তামীমের মতো জামায়াতপন্থী আইনজীবীকে প্রসিকিউটর বানিয়ে সরকারের বিচার প্রক্রিয়ায় দ্বৈত চরিত্র স্পষ্ট হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট তিন দফা দাবি তোলা হয়। দাবিগুলো হলো চট্টগ্রামে জোটের কর্মসূচিতে হামলাকারী শিবির ক্যাডারদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে। নারী নেত্রীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এটিএম আজহারের দায়মুক্তির রায় পুনর্বিবেচনায় সর্বোচ্চ আইনি ও নৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি রিপা মজুমদার, বিপ্লবী ছাত্র যুবা আন্দোলন নগর কমিটির সহ-সভাপতি ঈশা দে, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি তৌকির আহমেদ, বৃহত্তর চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম নগরের সাধারণ সম্পাদক অংহ্লাসিং মারমা,গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহসভাপতি পুষ্পিতা নাথ উপস্থিত ছিলেন।
