অবশেষে বদলি হলেন চমেক হাসপাতালের ‘পাওয়ারফুল মঈনুদ্দিন


চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের টেন্ডার শাখার বহুল আলোচিত এবং সমালোচিত কর্মচারী মঈনুদ্দিন আহমদকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ, দরপত্র কারচুপি এবং টেন্ডারবাজির ‘নাটের গুরু’ হিসেবে পরিচিত এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক আদেশে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এ. বি. এম. আবু হানিফ স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়েছে, আগামী ৫ দিনের মধ্যে তাকে বর্তমান কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। অন্যথায় তাকে সরকারি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
২৭ মে এক অফিস আদেশে তাকে বদলি করা হয়। একই আদেশে হাসপাতালটির লিলেন কিপার তৌহিদুল আলম চৌধুরীকে মাগুরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়। তৌহিদুল আলম চৌধুরী পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সদস্য বলে জানা গেছে।
বদলির সিদ্ধান্ত আসার ঠিক আগে, চমেক হাসপাতালের টেন্ডার কারচুপির একের পর এক ভয়াবহ অনিয়মের প্রমাণ হিসেবে ফাঁস হয় আটটি অডিও ক্লিপ। যেখানে শোনা যায়, মঈনুদ্দিন আহমদ ঠিকাদার এম রহমান এন্টারপ্রাইজের নাছির উদ্দিন চৌধুরী, শাপলা এন্টারপ্রাইজের প্রণয়ন বড়ুয়া এবং আলী এসোসিয়েটের শওকত আলীর সঙ্গে টেন্ডারের দরদাম সংযোজন, বিয়োজন, শর্ত পাল্টানো এবং রাতের আঁধারে দরপত্র ঠিক করার মতো নানা কারসাজির ছক নিয়ে আলাপ করছেন। অডিওতে স্পষ্ট বোঝা যায়, বাজারদরের তুলনায় অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য সরবরাহ, দরপত্র বাতিলের ছলচাতুরি এবং নিজেদের সিন্ডিকেট ধরে রাখতেই কৌশলে দরপত্র প্রক্রিয়া পরিচালনা করতেন মঈনুদ্দিন।
এতদিন এসব অভিযোগ শুধু মুখে মুখে ছিল। দুদকের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের অনুসন্ধানেও প্রাথমিকভাবে মঈনুদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছিল। ঠিকাদারদের সঙ্গে আঁতাত করে দরপত্র প্রস্তুত করা, হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ নথি বাইরে নেওয়া এবং কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবু এক চিকিৎসক নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এর আগেও একবার অভিযোগের মুখে মঈনুদ্দিনকে টেন্ডার শাখা থেকে সরিয়ে আইসিটি শাখায় বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা ছিল কাগজে-কলমে। বাস্তবে তিনি টেন্ডার শাখাতেই কাজ চালিয়ে যান। পরে দ্বিতীয় দফা বদলির আদেশ এলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চমেক হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ, তাকে বদলি করা মানেই আইওয়াশ। কারণ তিনি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকেন।
সূত্র জানায়, এবারও বদলি ঠেকানোর জন্য চমেক হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বিশেষ উদ্যোগী হয়েছেন। বদলির আদেশ যেন কার্যকর না হয়, সেজন্য বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তিনি। হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ, মঈনুদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় থেকে অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
এসব বিষয়ে কথা বলতে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিনকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
