হাজারীবাগ থানায় রাজবাড়ী সরকারী কলেজের প্রফেসর হুমায়ূন কবিবের বিরুদ্ধে মামলা!


রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সাইক্লোজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম হুমায়ূন কবিরের (৫০) বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন সোনিয়া জামান নামের এক ব্যবসায়ী নারী।
ধর্ষণ ও প্রতারণার অভিযোগে এজাহারভুক্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম ড. এস. এম. হুমায়ূন কবির। তিনি রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সাইক্লোজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তার বয়স ৫০ বছর।
অভিযুক্তের পিতার নাম ডা. ইমান আলী, তবে মায়ের নাম এজাহারে অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার স্থায়ী ঠিকানা মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় থানাধীন দৌলদিয়া গ্রামে। বর্তমানে তিনি ঢাকার রমনা থানাধীন সেগুনবাগিচা এলাকার ইস্টার্ন উলানিয়া ভবনের ১৩তম তলার ফ্ল্যাট নম্বর ১৩০১ (বাসা নম্বর ২/১৭০১)-এ বসবাস করছেন।
মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ড. হুমায়ূন কবির দীর্ঘদিন ধরে তাকে প্রেম ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। সরল বিশ্বাসে তিনি সম্পর্ক চালিয়ে গেলেও পরবর্তীতে অভিযুক্ত সকল যোগাযোগ বন্ধ করে সাফ জানিয়ে দেন, তিনি বিয়ে করবেন না।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত পরিকল্পিতভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে একাধিকবার তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন, যা গুরুতর অপরাধ। বাদী ঘটনাটিকে সরল বিশ্বাসের অপব্যবহার এবং আইনত ধর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে বিচার দাবি করেছেন।
হাজারীবাগ থানা সূত্রে জানা গেছে, বাদী মোসাঃ সোনিয়া জামানের দায়ের করা এজাহারটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধনী ২০২০)-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় গ্রহণ করা হয়েছে। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে এবং অভিযুক্ত ড. হুমায়ূন কবিরের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তদন্তের স্বার্থে বাদী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের বক্তব্য রেকর্ড করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ভুক্তভোগী মোসাঃ সোনিয়া জামান বলেছেন, তিনি ন্যায়বিচারের প্রত্যাশায় আইনের আশ্রয় নিয়েছেন এবং আশা করছেন দোষী ব্যক্তির উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
এজাহারে মোসাঃ সোনিয়া জামান উল্লেখ করেছেন যে, ২০১৬ সালে একজন পরিচিতের মাধ্যমে বিবাদীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর বিবাদী তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ২০০০ সালে তার স্বামীর মৃত্যুর বিষয় জানার পর বিবাদী বিভিন্ন সময়ে তাকে প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাব দেন, যা তিনি বরাবর প্রত্যাখ্যান করে আসছিলেন।
২০২৩ সালে, নিজের ও তার মেয়ে সাদিয়া শারমিনের (২৫) ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি বিবাদীর প্রস্তাবে রাজি হন এবং প্রেমের সম্পর্ক শুরু করেন। বিবাদী তাকে দ্রুত বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এরপর থেকে বিবাদী তার বিশ্বাসের অপব্যবহার করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
প্রথম ঘটনাটি ঘটে ০৬ জানুয়ারি ২০২৩, রাত আনুমানিক ১০টায়। সেদিন সোনিয়ার মেয়ে সাদিয়া একটি প্রোগ্রামে বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। বিবাদী সনিয়ার ধানমন্ডির বাসায় (বাসা নম্বর ৩২০/১, ফ্লাট ৫-বি) এসে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। তিনি প্রতিহত করার চেষ্টা করলে বিবাদী তাকে দ্রুত বিয়ে করে তার বর্তমান ঠিকানায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এই আশ্বাসে তিনি সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখেন।
এরপর বিভিন্ন সময়ে বিবাদী একই কায়দায় তার বাসায় এসে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, রাত ৩টায়। পরদিন (০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) সকাল ৭টায় বিবাদী তার মোবাইল নম্বর ব্লক করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সোনিয়া বিবাদীর বাসায় গিয়ে বিয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি স্পষ্টভাবে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, বিবাদী তার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারণা করেছেন। সোনিয়া জানান, ঘটনার পর তিনি বিবাদীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি এজাহার দায়ের করতে থানায় উপস্থিত হন, যার কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
মামলার বিষয়ে অভিযুক্ত ড. এস এম হুমায়ূন কবিরের বক্তব্য জানতে তার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যা তদন্তে স্বচ্ছতা ও দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি তুলছে। রাজবাড়ী শিক্ষাঙ্গন ও সামাজিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
