ভোলার আলোচিত সাবেক কাউন্সিলর আতিকুর রহমানের উত্থান


ভোলা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আতিকুর রহমানকে ঘিরে একাধিক অভিযোগে সরব স্থানীয় রাজনীতি ও প্রশাসনিক মহল। ফজলুর রহমানের ছেলে আতিকুর রহমান চরফ্যাশনের একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান। তবে গত কয়েক বছরে তার অবিশ্বাস্য উত্থান ও বিপুল সম্পদ অর্জন ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তার বাবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে চাকরি করেন। আতিক তৎকালীন পৌরসভার মেয়রকে ঘুষ দিয়ে কাউন্সিলর পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নির্বাচিত হওয়ার জন্য তিনি মেয়রকে ঘুষ হিসেবে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করেন। এই অভিযোগের কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত হয়নি, তবে এলাকাবাসীর মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে।
রাজনৈতিকভাবে যুবলীগের সঙ্গে যুক্ত আতিকুর রহমান এখন ভোলা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাংগঠনিক নিয়মনীতি উপেক্ষা করে তিনি দলীয় প্রভাব ও লেনদেনের মাধ্যমে এ পদ দখল করেন। তার এই উত্থানকে অনেকেই ‘রাজনীতির বাণিজ্যিকীকরণের প্রতিফলন’ বলে মন্তব্য করেছেন।
সম্পদের পাহাড়: রাতারাতি কোটিপতি
আতিকুর রহমানের আর্থিক উত্থান যথেষ্ট রহস্যজনক। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে তিনি একাধিক দামী স্থাপনার মালিক হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে তার মালিকানাধীন সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে, ভোলার কালিবাড়ি রোডে একটি দৃষ্টিনন্দন ডুপ্লেক্স বাড়ি, ঢাকা মিরপুর-১০ এর সেভেন আপ গলিতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরে আরও একটি ফ্ল্যাট, সিলেটে ঠিকাদারি কার্যক্রম এখনো চালু রয়েছে, নিজ ওয়ার্ড ৮ নম্বর এলাকাতেও রয়েছে বাড়ি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নামে-বেনামে জমি ও ফ্ল্যাট, যেগুলোর প্রকৃত উৎস অজানা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মূলত সরকারি প্রকল্পে ঠিকাদারি এবং রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অথচ সরকারি হিসাব অনুযায়ী তার বৈধ আয়ের উৎস অত্যন্ত সীমিত।
এতসব আলোচিত অভিযোগ ও সম্পদ থাকার পরও আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পান না।
স্থানীয় নাগরিক সমাজ ও স্বচ্ছতা বিষয়ক সংগঠনগুলো আতিকুর রহমানের সম্পদের উৎস এবং রাজনৈতিক প্রভাব খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আতিকুর রহমানের উত্থান সাধারণ মানুষের প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—বাবার সরকারি চাকরির সীমিত বেতনে ছেলে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে ওঠা কিভাবে সম্ভব হলো? এটি কি কেবলই তার যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ফল, নাকি এর পেছনে রয়েছে দুর্নীতির সুগভীর শিকড়?
