সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj
শিরোনাম
  • অভ্যুত্থানে ১০ শহিদসহ আহত ১৭৫৭ জুলাইযোদ্ধার গেজেট প্রকাশ দান–খয়রাতে গড়া জীবন থেকে চাঁদাবাজির অন্ধকারে: সমাজ কোন পথে হাঁটছে? নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে ৬০ হাজার সেনাসদস্য: প্রেসসচিব তাসকিন আহমেদের বিরুদ্ধে মারধরের লিখিত অভিযোগ লালমনিরহাটে ২ ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, উল্টে গেছে বগি রূপপুর দুর্নীতির অভিযুক্ত ‘মিস্টার ম্যানেজার’ আশরাফুল ইসলামের অদৃশ্য জাদু! দুর্বৃত্ত রাজনীতি নয়, আজ থেকে এনসিপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করছি: নীলা ইস্রাফিল খামেনিকে হত্যা ও ইরানে হামলার হুমকি দিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াকআউট করে আবারও ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে যোগ দিল বিএনপি পেহেলগামের ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি: চিদাম্বরম
  • ৫ আগস্টের পর ভাগ্য খুলে যায় রিয়াদের, যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়েছিলেন

    ৫ আগস্টের পর ভাগ্য খুলে যায় রিয়াদের, যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়েছিলেন
    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    ঢাকার গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে গুলশান থানা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তরা প্রথমে ১০ লাখ টাকা আদায় করে এবং পরে আরও ৪০ লাখ টাকা দাবি করলে তাদের আটক করা হয়।

    শনিবার রাতে গুলশান এলাকায় অভিযান চালিয়ে সংগঠনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রাজ্জাক সোলাইমান রিয়াদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার আদালত চারজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। অপর একজন কিশোর হওয়ায় তাকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।

    কীভাবে আদায় করা হয় চাঁদা: ১৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে পলাতক আসামি থাকার ‘তথ্য’ দিয়ে শাম্মী আহমেদের বাসায় পুলিশ নিয়ে যান রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা। নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে আতঙ্ক তৈরি করেন। যদিও সেদিন কোনো পলাতক আসামিকে পাওয়া যায়নি। এরপর পুলিশের উপস্থিতি কাজে লাগিয়ে শাম্মীর স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরকে মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করেন।

    এ বিষয়ে সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় করা মামলায় উল্লেখ করেন, প্রথম দফায় নিজের কাছে থাকা পাঁচ লাখ এবং ভাইয়ের থেকে ধার নিয়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেন রিয়াদ ও অপুকে।

    আবারও ৪০ লাখ টাকা দাবি: চাঁদা দেওয়ার পরও থেমে থাকেনি চক্রটি। ১৯ জুলাই দ্বিতীয় দফায় বাসায় এসে আরও টাকা দাবি করে তারা। সর্বশেষ গত শনিবারও তারা আবার গিয়ে ৪০ লাখ টাকা দাবি করে এবং না দিলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। সেসময় গুলশান থানা পুলিশ গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রিয়াদসহ পাঁচজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। কাজী গৌরব ওরফে অপু পালিয়ে যান।

    পুলিশ যা বলছে: ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘এই ছেলেরা ভয় দেখানোর জন্য পুলিশকে ট্রাম্প কার্ড বানিয়েছে। পুলিশকে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছে, আমরা কিন্তু আপনাকে যখন–তখন ধরিয়ে দিতে পারি। তার পরদিনই টাকা নেয়। এরপর আমরা নজরদারি বাড়িয়ে হাতেনাতে ধরেছি।’

    রিমান্ডে ৪ জন, একজন কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে: মামলায় রিয়াদ, সাকদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, ইব্রাহিম হোসেন ও আরও একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ইব্রাহিম ঢাকার কমিটির আহ্বায়ক এবং সিয়াম ও সাদাব সদস্য। আদালত চারজনকে সাত দিনের রিমান্ডে এবং একজনকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

    জুলাই চেতনা থেকে চাঁদাবাজি পর্যন্ত: রিয়াদ আগে কাদের মির্জার ক্যাডার ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁর জীবনযাত্রায় বড় পরিবর্তন আসে। দামি ব্র্যান্ডের পোশাক, গ্রামে পাকা বাড়ি নির্মাণ এবং কোরবানিতে লাখ টাকা দামের গরু—সব মিলিয়ে তাঁর বিত্তবৈভব নিয়ে এলাকায় আলোচনা তৈরি হয়।

    নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নে রিয়াদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, সেখানে তিনি একতলা একটি পাকা ভবন নির্মাণ করছেন, যার ছাদ ঢালাই শেষ হয়েছে মাত্র। প্রকৌশলীরা জানান, এ পর্যন্ত কাজ করতে খরচ হতে পারে প্রায় ১৫ লাখ টাকা।

    রিয়াদের গ্রামে গিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, আর্থিক অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা একজন ছাত্রের বাড়িতে হঠাৎ পাকা ভবন নির্মাণ নিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা চলছে। এ আলোচনায় নতুন মাত্রা পেয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগে রিয়াদের গ্রেপ্তারের ঘটনা।

    নাম প্রকাশ না করার শর্তে রিয়াদের এক চাচি গণমাধ্যমকে বলেন, রিয়াদের বাবা ও বড় ভাই দুজনই রিকশা চালাতেন। এখন চালান না। রিয়াদ ঢাকার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেন বলে শুনেছেন।

    ‘আমার ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার’—রিয়াদের মা: রিয়াদের মা রেজিয়া বেগম জানান, তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট ছেলে রিয়াদ ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। বড় ছেলে ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তবে বড় ছেলে ফুটপাতে ব্যবসা করেন, এমন কথাও বলেন রেজিয়া বেগম।

    তিনি আরও বলেন, ছোট ছেলেকে মানুষের সাহায্যে ঢাকায় পড়াতে পাঠিয়েছেন। বাড়ির নির্মাণে ব্র্যাক থেকে ঋণ নিয়েছেন, স্বামীর জমানো টাকাও ব্যবহার করেছেন। তাঁর দাবি, ছেলে নিরপরাধ, ষড়যন্ত্রের শিকার।

    প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা: বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। তিনি লিখেছেন, "এই প্রথম পুলিশ হাতে ধরা খেল ওরা, অথচ ওদের শিকড় আরও গভীরে।"

    একাধিক আইনজীবী আদালতে আসামিদের উদ্দেশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শুনানি শেষে আদালত প্রাঙ্গণেও তাদের প্রতি কটূক্তি করা হয়।

    পুলিশ বলছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই অংশটি এখন একটি সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রে রূপ নিয়েছে। যেসব তরুণ ‘ছাত্র প্রতিনিধি’ পরিচয়ে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করত, তারা এখন চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে।


    গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

    আরও পড়ুন