দিনদিন বাড়ছে মানুষ, কমছে চাষের জমি বাড়ছে নতুন নতুন বাড়ি


পটুয়াখালীতে দিন দিন বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে নতুন নতুন বাড়ি আর বুড়াঁগৌরাঙ্গ ও তেঁতুলিয়া নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে কমছে চাষের জমি। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগ থাকলেও সচেতনতার অভাবে উপজেলার জম্ম নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা আলোর মুখনি। এখনও দুর্গম ও চর-অঞ্চল এলাকার বসতিদের ধর্মান্ধ ও কুসংস্কার আষ্টেপৃষ্টে বেধে রেখেছে। ফলে প্রতিবছর লোকসংখ্যাবৃদ্ধির কারনে নির্মান হচ্ছে নতুন নতুন বাড়িঘর।
অপরদিকে, নদী ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা না থাকায় শত শত একর জমি নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ায় কমে যাচ্ছে ফসলি জমি । সরেজমিনে দেখা ঘুওে দেখা, দশমিনা উপজেলার চর-বোরহান, চর-শাহজালাল ও চর হাদিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির অস্বাভাবিক চিত্র পাওয়া গেছে। এসব চরে প্রায় ১১হাজার লোকের বসতি। প্রতি পরিবারে গড় লোকসংখ্যা ৬/৭জন। অধিক সন্তান অধিক উপার্জনে বিশ্বাসী চরবাসীরা জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করতে না-রাজ। আধা সচেতন মায়েরা উপজেলা সদরে এসে গোপনে জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি বা ইনজেকশন কিনে নেয়। তাও আবার স্বামী বা পরিবারের সদস্যদেরকে না জানিয়ে ব্যবহার করতে হয় তাদের। জম্ম নিয়ান্ত্রন বড়ি ব্যবহার করায় অনেক সময় স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকারও হতে হয়। চরবোরহানে এরকম একজন নির্যাতিত নারীর সন্ধান পাওয়া যায়। আলম ফকিরের স্ত্রী ফেরেজা বেগম (৩৬)।
তার বিয়ে হয় ১৩বছর বয়সে। বাল্যবিয়ে হলেও ফেরেজা এখন ৩মেয়ে ১ছেলের জননী। তার স্বামী আরও সন্তান নিতে চায়। এ চরের বারেক গাজীর স্ত্রী শাহিনুরের ৬সন্তান, হেলেনার ৫ সস্তান, হাসিনার ৪ সন্তান। এদের প্রত্যেকের স্বামী আরও সন্তান নিতে চায়। তাদের ধারনা হচ্ছে বেশি সন্তান হলে লাঠিয়ালদের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে পারবে। পাশাপাশি আয় রোজগার বেশি হবে। চরশাহজালালের ৫সন্তানের জননী মোসা. হেলেনা বলেন, পোলা মাইয়া ঝে দ্যায় হে ন্যয়ুইন্না মালিক, বন্দা অয়ুইন্না ওসুদ পত্তরে খোদায় ব্যারাজী অয় ও গুনা অয়। চরহাদির মাজেদা বিবি ৬সন্তানের জননী। তার ছেলে নাই একটিও। তাই তিনি ছেলে না হওয়া পর্যন্ত যত সন্তান নিতে হয় তত বার নিবেন।
দশমিনা উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা যায়, জন শুমারি ও গৃহ গননা ২০২২ এর তথ্যমতে দশমিনা উপজেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার ৪শ” জন। বসত বাড়িঘরের সংখ্যা ৩০ হাজার ৮শ’ ৯০টি।
দশমিনা উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য জড়িপ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জরিপে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে মোট লোকসংখ্যা ১লাখ ৪৪হাজার ২শ’ ৯৮জন। বসত বাড়ি সংখ্যা ৪৭হাজার ৯শ’ ১১টি’তে। ফলে ৮বছরে উপজেলায় মোট লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০হাজার ৯শ’ ১০জন। নতুন বসত বাড়ির সংখ্যা বেড়েছে ১৯হাজার ৪শ’ ২১টি’তে।
উপজেলার বুড়াঁগৌরাঙ্গ ও তেঁতুলিয়া নদীর র্তীরবর্তী এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক বছরে নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে উপজেলার বীজ বর্ধন খামার, বাঁশবাড়িয়ার ঢনঢনিয়া, হাজির হাট, আউলিয়াপুর, চরঘূূর্নী, চরহাদি ও চর-বোরহানসহ মোট ১হাজার ৭শ’ ৯৪ একর জমি নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে । দেশের সর্ববৃহত বীজ বর্ধন খামারের আওতায় ১হাজার ৪৪একর জমি থাকলেও এবার চাষাবাদ করা হয় সাড়ে ৪শ’ একর জমি। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৬শ’ ৯৪একর জমি। নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে ঢনঢনিয়া ও হাজির হাট ৫শ’ একর , চরহাদির ৪শ’ একর এবং চরবোরহানে ২শ’ একর জমি।
এদিকে, উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের জরিপে আবাদযোগ্য জমির পরিমান ১৮হাজার ৮শ’ ১০হেক্টর। এক ফসলি জমি ১হাজার ৬হেক্টর, দু’ ফসলি ১৪হাজার ৩শ’ ৪১হেক্টর, তিন ফসলি ৩হাজার ৪শ’ হেক্টর। মোট খাদ্য উৎপাদন হয় ৫৮হাজার ৩শ’ ৩৪মেট্রিকটন। ওই সালের লোকসংখ্য অনুসারে খাদ্যের চাহিদা ২০হাজার ৮শ’ ২৯মেট্রিকটন। উদ্ধৃত্ত থাকে ৩৪হাজার ২শ’ ৭৯ মেট্রিকটন। যেহেতু লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ২০হাজার ৯শ’ ১০জন । প্রতিটি লোকের খাদ্যের চাহিদা রয়েছে ৪শ’ ৬২গ্রাম চাউলের। ওই হিসাবে প্রতি বছরে খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে ৩হাজার ৫শ’ ২৬দশমিক ০৫৩৩ মেট্রিকটন চাউলের । খাদ্য উদ্ধৃত্ত থাকে ৩০হাজার ৭শ’ ৫২দশমিক ৯৪৬মেট্রিকটন।
এবিষয়ে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম বলেন, চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ না থাকায় ঝড় জলোচ্ছ্বাসে নদী ও সাগরের নোনা পানি ঢুকে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে তাই চরাঞ্চলে বেড়িবাঁধ নির্মান করা একান্ত প্রয়োজন।
এবিষয়ে সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহান জানান বলেন, চরহাদীতে বেড়ীবাধ নির্মানের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তিনি আরো বলেন, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে চরে নোনা পানি ঢুকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এতে কৃষকের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ জাফর আহমেদ বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ চরাঞ্চলে নদী ও সাগরের নোনা পানি ঢুুকে কৃষকের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।
এবিষয়ে দশমিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইরতিজা হাসান বলেন, পটুয়াখালী জেলা মিটিং ও দশমিনায় সমন্বয় সভায় এবিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক উপজেলার গুরুত্বপূর্ন কিছূস্থানে জিওব্যাগের মাধ্যেমে ভাঙ্গন রোধ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চরাঞ্চলে বেড়িবাধ নির্মান করা হবে। আর নদীর ভাঙ্গন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহন হবে।
দৈএনকে/জে, আ
