কক্সবাজার ছাড়া বিকল্প নয়, শর্তে অনড় ফিফা


বাংলাদেশে ফুটবল উন্নয়নে বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। ফিফার অর্থায়নে কক্সবাজারে ‘সেন্টার ফর এক্সিলেন্স’ নামে একটি আধুনিক ফুটবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং এলাকায়।
তবে প্রকল্প এলাকা বনভূমির আওতাভুক্ত হওয়ায় পরিবেশবাদীরা এর কড়া বিরোধিতা করেন। বন উজাড় করে স্থাপনা গড়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন পরিবেশ ও নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো। তাদের প্রতিবাদ ও আইনগত জটিলতার কারণে রামুতে প্রকল্প বাস্তবায়ন বন্ধ হয়ে যায়।
এ অবস্থায় বিকল্প জমির খোঁজে নেমেছে বাফুফে। কক্সবাজারের মধ্যেই নতুন উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেতে চায় তারা। তবে প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় সময়মতো কাজ শুরু না হলে, ফিফা বরাদ্দকৃত অর্থ প্রত্যাহার করে নিতে পারে—এমন আশঙ্কায় রয়েছে দেশের ফুটবল প্রশাসন।
বাফুফের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “আমরা চেষ্টা করছি বিকল্প জায়গা চূড়ান্ত করতে। তবে দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।”
সেন্টার ফর এক্সিলেন্স প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ফুটবলে এক নতুন যুগের সূচনা হতে পারত। তরুণ ফুটবলারদের প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো ও ক্রীড়া বিজ্ঞানে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ তৈরি হতো। তবে বর্তমান অনিশ্চয়তায় প্রশ্ন উঠেছে—এই স্বপ্ন আদৌ বাস্তব হবে কি না।
বাংলাদেশে ফুটবল উন্নয়নে একটি বড় ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। কক্সবাজারে ‘সেন্টার ফর এক্সিলেন্স’ নামে ফিফার অর্থায়নে একটি আধুনিক ফুটবল একাডেমি গড়ার পরিকল্পনা থাকলেও, জমিজট ও পরিবেশগত জটিলতায় তা আটকে আছে বহুদিন। এ পরিস্থিতিতে ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শুরু না হলে, ফিফার অর্থায়ন হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল।
শনিবার (১৪ জুন) ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দেন তাবিথ। তিনি বলেন,
“আমরা অনেক দিন ধরে ফিফা টেকনিক্যাল সেন্টার ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তবে জমি সংক্রান্ত জটিলতা ও অন্যান্য কাগজপত্রের কারণে প্রকল্পের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। ফলে ফিফা আমাদের ওপর চাপ তৈরি করেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে যদি কাজ শুরু না হয়, তাহলে ফান্ড হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।”
তবে আশার কথা জানিয়ে তাবিথ যোগ করেন,
“আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে পারি—আমরা ফান্ড হারাব না। অচিরেই কাজ শুরু করতে পারব।”
এছাড়া, শুধু সেন্টার ফর এক্সিলেন্স নয়, ফিফার বিশ্বব্যাপী ‘ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট স্কিম’-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে একটি ফিফা সার্টিফাইড একাডেমি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথাও জানান বাফুফে সভাপতি। ফিফা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৭৫টি আধুনিক একাডেমি স্থাপন করছে, যার প্রতিটিতে নিজস্ব অনুদান ও কারিগরি সহায়তা দেয় সংস্থাটি।
তাবিথ বলেন,
“সদস্য দেশ হিসেবে আমরাও আবেদন করেছি। ফিফার ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট কমিটি যদি আমাদের প্রস্তাব অনুমোদন করে, তাহলে বিষয়টি যাবে আর্সেন ওয়েঙ্গারের চূড়ান্ত যাচাইয়ে। আমি সর্বশেষ কংগ্রেসে আর্সেন ওয়েঙ্গারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছি। তিনি আমাদের কাছ থেকে একটি শক্ত প্রতিশ্রুতি চেয়েছেন, যা আমি তাকে দিয়েছি।”
তাবিথ আরও জানান, ফিফার সঙ্গে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক চুক্তির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রাথমিক চিঠি চালাচালি হয়েছে।
“ফিফা আমাদের কিছু শর্ত পাঠিয়েছে। আমরা যদি সেগুলো পূরণ করতে পারি, তাহলে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই একাডেমি স্থাপনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতে পারব,” —বলেন বাফুফে সভাপতি।
সামনে সময় কম, প্রত্যাশা বড়
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে কাঠামোগত ফুটবল উন্নয়ন নিয়ে সমালোচনা চললেও, এই প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন হলে তা হতে পারে দেশের ফুটবলের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ শুরু না হলে, বড় একটি সুযোগ হারানোর শঙ্কাও থেকেই যাচ্ছে।
