রেকর্ড রান তাড়ায় পিএসএল শিরোপা জিতলো লাহোর কালান্দার্স


রোমাঞ্চকর এক ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামলো এবারের পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। ব্যাটে-বলের উত্তেজনাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতা বরাবরের মতোই ক্রিকেটপ্রেমীদের উপহার দিলো একাধিক স্মরণীয় মুহূর্ত। তবে শেষ ম্যাচটি যেন ছাপিয়ে গেল সবকিছু—রানের উৎসব, উত্তেজনার চূড়া, আর নাটকীয়তার এক অনন্য মেলবন্ধন।
ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল লাহোর ও করাচি। ম্যাচের শুরু থেকেই বোঝা যাচ্ছিল এটি হতে চলেছে এক উচ্চমানের লড়াই। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে করাচি তোলে এক বড় সংগ্রহ, যেখানে তাদের ব্যাটারদের দুর্দান্ত ফর্ম নজর কাড়ে। তবে লাহোরের জয়ের আশা কেড়ে নেয়নি সেটি। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই কিছুটা চাপে পড়লেও, ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন কুশাল পেরেরা ও সিকান্দার রাজা।
পেরেরা শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট চালান, চার-ছয়ের ঝড় তোলেন পুরো মাঠজুড়ে। অন্যদিকে সিকান্দার রাজা খেলেন পরিণত এবং ধীরস্থির কিন্তু কার্যকর ইনিংস। তাদের জুটি লাহোরের ইনিংসে আনে স্থিতি ও গতি—যা শেষ পর্যন্ত জয় নিশ্চিত করে দেয়।
দুই তারকার ব্যাটিং যেন এক কথায় ছিল চোখ ধাঁধানো। একদিকে পেরেরার নিখুঁত টাইমিং, অন্যদিকে রাজার বুদ্ধিদীপ্ত স্ট্রোকপ্লে—এই দুইয়ের সমন্বয়ে গড়া হয় পিএসএলের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় একটি ফাইনাল।
লাহোরের এই শিরোপা জয়ে অবদান রাখে দলীয় প্রচেষ্টাও। বোলাররা শেষ দিকে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে, আর ফিল্ডারদের তীক্ষ্ণ নজর ও দক্ষতা ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়।
শেষ পর্যন্ত, পিএসএল ২০২৫ এক নাটকীয়, জমজমাট ও রোমাঞ্চকর ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হলো, যা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে থাকবে দীর্ঘদিন। লাহোর দলটি আবারও প্রমাণ করলো যে তারা কেন এই লিগের অন্যতম সফল এবং ধারাবাহিক দল।
রোববার রাতে পিএসএল ২০২৫-এর রোমাঞ্চকর ফাইনালে কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো লাহোর কালান্দার্স। শেষ তিন ওভারে যখন প্রয়োজন ছিল ৪৭ রান, তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিল ম্যাচ বুঝি হাতছাড়া। কিন্তু কুশাল পেরেরা ও সিকান্দার রাজা যেন ঠিক তখনই নাটকীয়তার মঞ্চে আবির্ভূত হলেন।
শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৩ রান, আর তা এক বল হাতে রেখেই পূরণ করে ফেলেন এই দুই ব্যাটার। রাজা মাত্র ৭ বলে করেন ২২ রান, আর পেরেরা খেলেন ম্যাচজয়ী ৩১ বলে ৬২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। তাদের ব্যাটে ভর করেই লাহোর পৌঁছে যায় ২০২ রানের বিশাল লক্ষ্যে, যা টি-টোয়েন্টি ফাইনালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়ার নতুন বিশ্বরেকর্ড।
এর আগে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ফাইনালে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডটি ছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের দখলে। ২০১৪ আইপিএলের সেই ঐতিহাসিক ফাইনালে ২০০ রান তাড়া করেছিল শাহরুখ খানের দল। লাহোর এবার সেটিকেও পেছনে ফেলে দিলো।
এই ঐতিহাসিক ফাইনালে লাহোরের একাদশে ছিলেন বাংলাদেশি লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। যদিও বল হাতে তাকে থামতে হয়েছে মাত্র ১৩ রানে, তবুও পিএসএলের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব ছিল। স্কোয়াডে ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজও। কাকতালীয়ভাবে, কলকাতার ঐতিহাসিক ২০১৪ ফাইনালেও ছিলেন সাকিব আল হাসান, যিনি সে ম্যাচে একাদশে খেলেছিলেন।
এই জয়ের মাধ্যমে লাহোর কালান্দার্স হয়ে উঠেছে পিএসএলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল। ২০২২ ও ২০২৩ সালের টানা শিরোপার পর ২০২৫ সালে এসে ফের চ্যাম্পিয়ন হলো তারা, যদিও ২০২৪ সালে এই ধারাবাহিকতা টিকেনি। আর অধিনায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি গড়ে তুললেন নজিরবিহীন কীর্তি—তিনবার শিরোপা জেতা প্রথম ও একমাত্র অধিনায়ক তিনি। এখনও পর্যন্ত কোনো পিএসএল অধিনায়কই দুইবারের বেশি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি।
ব্যাটে-বলের উত্তেজনায় ঠাসা এই ফাইনাল কেবল একটি শিরোপা নির্ধারণ করেনি, বরং উপহার দিয়েছে ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়ার মতো এক ম্যাচ। কুশাল পেরেরা ও সিকান্দার রাজার দুর্দান্ত জুটি, শাহিন আফ্রিদির দুর্দান্ত নেতৃত্ব, আর নতুন রেকর্ড—সব মিলিয়ে এটি নিঃসন্দেহে পিএসএলের স্মরণীয়তম ফাইনালগুলোর একটি হয়ে থাকবে।
