শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
Natun Kagoj

ইবিতে ঋণ খেলাপি হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

ইবিতে ঋণ খেলাপি হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

করোনাকালীন সময়ে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণের নিমিত্তে স্মার্টফোন ক্রয়ের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৫৬৮ শিক্ষার্থীকে ‘সফট লোন’ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশন (ইউজিসি)। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিংবা অধ্যয়নকালীন চারটি সমান কিস্তিতে বা এককালীন তাঁরা এই ঋণ পরিশোধ করার কথা থাকলেও লোন পরিশোধ না করেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তৎকালীন ‘সফট লোন’ কমিটির দায়িত্বে থাকা আহবায়ক বা সদস্য সচিব কেউই জানেন না কেউ ঋণ পরিশোধ করেছে কি-না। এমনকি কোনো উল্লেখযোগ্য নথিও নেই এসংক্রান্ত দপ্তরে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন শুধুমাত্র ইবিতেই প্রায় অর্ধকোটি বা ৪৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা পাবে শিক্ষার্থীদের কাছে। অন্যদিকে যথাযথ তদারকির অভাবে শিক্ষার্থীরাও বুঝতে পারছে না কিভাবে এই লোন শোধ দেবে বা আদৌ দেওয়া লাগবে কিনা।

জানা যায়, করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ২৫ জুন ইউজিসির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এক সভায় অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম থাকায় অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম নিশ্চিত করতে সে বছরের ৪ নভেম্বর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের সুদবিহীন ঋনের আওতায় এন্ড্রোয়েড ডিভাইস বা স্মার্টফোন ক্রয়ের জন্য ঋণ প্রদানের নিমিত্তে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন শিক্ষার্থীদের সফট লোন নীতিমালা প্রণয়ন করে। পরে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা হারে সুদবিহীন ঋণ দেওয়ার নিমিত্তে ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর বিজ্ঞপ্তি দেয় ইবি প্রশাসন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঋণ গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীকে তার ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে আগামী ৩১ জানুয়ারি ২০২১ এর মধ্যে ঋণের অর্থ প্রদান করা হবে এবং ঋণ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ এর মধ্যে স্মার্টফোন ক্রয়ের ভাউচারটি সফট লোন অনুমোদন কমিটির সদস্য-সচিবের নিকট জমা দিতে হবে। এছাড়া ঋণ গ্রহণকারী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিংবা অধ্যয়নকালীন সময়ে ৪ (চার) টি সমান কিস্তিতে বা এককালীন কেবল আসল অর্থ পরিশোধ করতে হবে এবং ঋণের সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর নামে কোনো ট্রান্সক্রিপ্ট ও সাময়িক/মূল সনদ ইস্যু করা হবে না।

পরে স্মার্টফোন ক্রয়ের জন্য আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যথেকে যাচাই-বাছাই শেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫শ’ ৬৮ জন শিক্ষার্থী ‘সফট লোন’ পাচ্ছেন বলে ঘোষণা দেন ‘সফট লোন’ অনুমোদন কমিটির আহবায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি দুপুরে তিনি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এদিকে সারাদেশে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন কেনার জন্য ৩৯ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থীকে সুদবিহীন ৩৩ কোটি ২০ লাখ ৮ হাজার টাকা ঋণ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। যা গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেন তৎকালীন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।

এদিকে করোনা মহামারির কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় পর ২০২১ সালের ২৫ অক্টোবর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কিংবা অধ্যয়নকালীন চারটি সমান কিস্তিতে বা এককালীন ঋণ গ্রহণ করা এসকল শিক্ষার্থীদের ঋণ পরিশোধ করার কথা থাকলেও না পরিশোধ করেই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন অনেকেই। এছাড়া ঋণ গ্রহণ করা এসকল শিক্ষার্থীর সঠিক তথ্য-উপাত্ত বা নথিও নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট।

এ বিষয়ে ‘সফট লোন’ অনুমোদন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের কাজ ছিলো শুধুমাত্র অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীর তালিকা প্রণয়ন করা। তারপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ওই সকল শিক্ষার্থীর ব্যাংক একাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। তারপর এই তালিকা এবং এ সংক্রান্ত সকল নথি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখায় জমা দেওয়া হয়েছিলো। তারা এটা ভালো বলতে পারবে।

এদিকে এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘সফট লোন’ অনুমোদন কমিটির সদস্য সচিব ও তৎকালীন একাডেমিক শাখার প্রধান এ. টি. এম. এমদাদুল আলম বলেন, আমি চাকরি ছেড়েছি আরও ২ বছর আগে। বহুবার কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও তারা এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে নি। যার ফলে বহু শিক্ষার্থী ট্রান্সক্রিপ্ট বা সনদ উত্তোলন করে চলে গেছে। হয়তো পুলিশ প্রশাসন দ্বারা এই টাকা উত্তোলন সম্ভব।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঋণ গ্রহীতা এক শিক্ষার্থী বলেন, সনদ উত্তোলনের সময়ে যদি আমাদের বিষয়টি প্রশাসন থেকে অবগত করা হতো, তাহলে ঋণ শোধ করে সনদ উত্তোলন করতাম। যেহেতু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সনদ উত্তোলনে কোনো জটিলতা তৈরি হয় নি, সেহেতু ভেবেছিলাম এটা আর শোধ করা লাগবে না।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি লোন নিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে তা পরিশোধ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বিদেশে যেটা হয়, শিক্ষার্থীরা চাকরিতে প্রবেশের আগ পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হয়। আমি মাত্র কয়েকমাস আগেই জয়েন করেছি। এ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নই, জেনে বিস্তারিত পরবর্তীতে জানাতে পারবো।


নাজমুল হুসাইন, ইবি প্রতিনিধি
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ