বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
Natun Kagoj

অদ্ভুদ অচিন গাছ !

অদ্ভুদ অচিন গাছ !
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বৃক্ষটির নাম সবার কাছে অজানা। কত বছর ধরে এটি ঠায় দাঁড়িয়ে আছে তা কারো সঠিক জানা নেই। বৃক্ষটিকে সবাই অচিন বৃক্ষ বলেই চেনে। জায়গাটিকে চেনে অচিন দ্বীপ হিসাবে। উদ্ভিদ বিভাগের কাছেও গাছটি অচেনা। কথিত আছে, এ বৃক্ষের ডালা-পালা কেউ ভয়ে ছিড়েনা। ছিড়লে পেট ব্যথা করে। তবে রোগবালাইয়ের জন্য এ বৃক্ষের পাতা খুবই উপকারী। মানত করলে উপকার হয়। সুনিবিড় ছায়ায় বিশ্রাম নিলে ক্লান্ত পথিক আরাম বোধ করে। তাই গাছটি ‘ছায়াবৃক্ষ’ হিসেবে পরিচিত। 

 রূপগঞ্জ থানা থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সদর ইউনিয়নের জাঙ্গীর গ্রামে অচিন গাছটির অবস্থান। দৈত্যাকৃতির গাছটি কবে, কীভাবে, কে রোপণ করেছিল, তা কারোর ধারণা নেই। তবে গাছটি নিয়ে এলাকায় রয়েছে অনেক কিংবদন্তি। সেসব কাহিনী রটে এলাকার মানুষের মুখে মুখে। 
বনবিভাগ ও গাছপালা নিয়ে গবেষণা করেন যাঁরা, তাঁদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে গাছটি দেখতে আসেন। দেখে চলে যান, কিন্তু আজ পর্যন্ত গাছটির প্রকৃত নাম শনাক্ত করতে পারেননি কেউ। বৃদ্ধরাও বলেন, তাঁরা বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে গাছটিকে দেখেছেন একই রকমভাবে। এলাকাবাসী গাছটির বয়স কেউ আড়াই’শ কেউবা তিন’শ বছর বলে দাবি করেন। 

গাছটি নিয়ে কিংবদন্তির শেষ নেই। এ গাছের ডাল কেটে রক্তবমি করে মারা গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তারপর থেকে কেউ ডাল কাটে না। এমন কাহিনী বলতে ও বিশ্বাস করতে এলাকার লোকজন অভ্যস্ত। 

স্থানীয় বয়োবৃদ্ধদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে গাছটির অজানা গা-শিউরে উঠার মতো কাহিনী। স্থানীয়রা বলেন, গাছটির বয়সম হবে প্রায় ৩০০ বছর। বিট্রিশ আমলে এখানে গভীর জঙ্গল ছিলো। সেখানে ভয়ে মানুষ উঁকিও দিতোনা। পাকিস্থান আমলে ৬২ সালের দিকে অজানা এক সাধু আচমকা গাছটির নিচে আশ্রয় নেয়। তার কানে ছিলো দুল। মাথায় ঝাকড়া চুল। পায়ে ঘুঙুর। পড়নে থাকতো পাটের চট। বাক প্রতিবন্ধী এ সাধু ক্ষিধে পেলে অচিন গাছের পাতা চিবিয়ে খেতো। তার পাশে সবসময় জলন্ত আগুনের কুন্ডলী থাকতো। আর বাঁশের তৈরী হুক্কা দিয়ে হুক্কা খেতো। ধীরে ধীরে মানুষের যাতায়াত শুরু হয়। একসময় মানুষ সাধুর কাছে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য পানি পড়া আনতো। উপকার পেয়ে অনেকে নানা কিছু মানত করতো। তার সঙ্গে সবসময় বালতি থাকতো। তাই ঐ সময় তাকে সবাই বালতি সাধু বলে চিনতো। 

বৃদ্ধরা আরো জানান, অচিন গাছের নিচে বিশাল আকৃতির সাপের বসবাস ছিলো। একদিন গর্ত থেকে সাপ বের হয়ে মানত করা মুরগী ধরে গর্তে ঢুকার চেষ্টা করে। এসময় সাধু পাগলা সাপের লেজে ধরে টানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। একবার মহররম মাসে আগুনের কুন্ডলী থেকে তার পড়নের চটে আগুন ধরে শরীরের বিভিন্ন স্থান ঝলসে যায়। ক্ষত অবস্থায় তার দেখভাল করতো স্থানীয় আমেনার মা। প্রায় আট দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মহররম মাসের ১৪ তারিখ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর জানাযা পড়ান স্থানীয় প্রয়াত কমুরউদ্দিন কাজী।  

জাঙ্গীর সুন্নী মাদ্রাসার মাওলানা ফাইজুদ্দিন বলেন, বালতি সাধু ইরাকের বাগদাদ শহরের এক পীরের শীষ্য। তাই তাকে নুরা বাগদাদী বলে ডাকতো অনেকে। সত্তোর বছর বয়সী হুমায়ুন মাষ্টার। এলাকার লোকের কাছে সম্মানীয়। তিনি বলেন, অচিন দ্বীপটা ওয়াকফ সম্পত্তি। অচিন গাছের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার দাদা ডেঙ্গুরি ভূইয়া প্রায় ১৩০ বছর বেঁচে গেছেন। বাবা সোলায়মান ভূইয়া বেঁচে গেছেন ৯০ বছর। তাদের মুখে ছোটকালে শুনেছি এ অচিন গাছের রূপকথার গল্প। তিনি বলেন, গাছটি অনেক পুরনো। নুরা বাগদাদের আগমন না হলে  অচিন গাছ ও অচিন দ্বীপের সৃষ্টি হতোনা। উদ্ভিদ বিভাগের লোকজনও গাছটির পরিচয় চিহ্নিত করতে পারেনি। ফলে এলাকাবাসী গাছটিকে অচিন গাছ বলেই চেনে। আর জায়গাটিকে চেনে অচিন তলা হিসাবে। 

তিনি বলেন, গাছটি দেখতে আশপাশসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসে। মানত করে। আগে কয়েকবার নুরা বাগদাদীর নামে মেলা বসতো। ঝামেলার কারণে এখন আর এইটা হয়না। মৃত মোতালিব মাষ্টারের বরাত দিয়ে হুমায়ুন মাষ্টার আরো বলেন, নুরা বাগদাদী মারা যাওয়ার ঠিক দেড় বছর পর তিনি পাশ্ববর্তী একটি মেলায় যান। সেখানে গিয়ে তিনি কথা বলতে এগিয়ে যান। এগিয়ে গিয়ে দেখেন তৎক্ষণাত নুরা বাগদাদী হাওয়া। বহু খোঁজাখোজির পরও তার আর দেখা মেলেনি। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, অচিন দ্বীপের ওয়াকফ সম্পত্তি দখলে নিতে একটি চক্র মরিয়া। দীর্ঘদিন ধরে এ চক্রটি নানাভাবে পাঁয়তারা চালিয়ে আসছে। পাশাপাশি অযত্নে-অবহেলায় রয়েছে অচিন গাছ ও নুরা বাগদাদীর মাজারটি। কথিত রয়েছে, অচিন বৃক্ষটির ঝড়ে পড়া পাতাও কেউ কুড়িয়ে নেয়না। বছওে দু’তিনবার পাতা ঝড়ে। আবার ঝড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন পাতায় পল্লবিত হয়ে ওঠে শাখা-প্রশাখা। গাছের ডাল কিংবা পাতা অকারণে ছিঁড়লে পেটে ব্যথা হয়। তবে মনোবাসনা কিংবা রোগবালাইয়ের জন্য কেউ যদি পাতা ছিঁড়ে চিবিয়ে খায় সেক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয় না। উল্টো রোগ ভাল হয়ে যায়। বৃক্ষটির পাতা দেখতে অনেকটা তেৎপাতার মতো। ফুল হয় না, তবে ছোট আকারের ফল হয়। দেখতে কিসমিসের মতো। 

কথা হয় মুড়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাছটি সম্পর্কে আমার জানা নেই। যদি সরকারীভাবে কোন নির্দেশনা আসে তাহলে উদঘাটনের চেষ্টা করবো। যদি এ গাছটি কোন ঔষধী গাছ হয় তাহলে আমাদের অনেক কাজে আসবে। উপজেলা বন কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার বলেন, শুনেছি এমন গাছের কথা। তবে এখনো পর্যন্ত দেখা হয় নাই। খোঁজ নিয়ে গাছটির পরিচয় জানার চেষ্টা করবো। 

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল আলম বলেন, আমি এখানে কিছুদিন হয় যোগদান করেছি। এটা ওয়াকফ সম্পত্তি কিনা আমার জানা নেই। যেহেতু জেনেছি বিষয়টি আমি দেখব।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

A PHP Error was encountered

Severity: Core Warning

Message: PHP Startup: Unable to load dynamic library 'tidy.so' (tried: /opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so (libtidy.so.5: cannot open shared object file: No such file or directory), /opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so.so (/opt/cpanel/ea-php74/root/usr/lib64/php/modules/tidy.so.so: cannot open shared object file: No such file or directory))

Filename: Unknown

Line Number: 0

Backtrace: