নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম টি-টোয়েন্টি জয় টাইগারদের


সিরিজের প্রথম টি-টুয়েন্টিতে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ছাড়া তারুণ্যনির্ভর নতুন চেহারার দলটাই এনে দিল সফরে স্মরণীয় সাফল্য। নেপিয়ারে ওয়ানডের পর টি-টুয়েন্টিতেও এলো কিউই মাটিতে টাইগারদের প্রথম জয়। ম্যাকলিন পার্কে ১৩৫ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ তাড়া করে ১৮.৪ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে।
বাংলাদেশের জন্য অতীতে নিউজিল্যান্ড সফর ছিল বিভীষিকাময় অধ্যায়। তাসমানপাড়ের দেশটিতে গেলেই শতভাগ হারের লজ্জা নিয়ে ফিরতে হতো দলকে। হতো না লড়াইও। এবার উল্টে গেল পাশার দান।
শুরুটা দুদশক অপেক্ষার পর গতবছরের জানুয়ারিতে প্রথম জয় দিয়ে, জয়টা আসে টেস্টে। এবারের সফরে ওয়ানডের পর এলো টি-টুয়েন্টি জয়ও। তিন সংস্করণেই একবার করে জয়ের স্বাদ নিল বাংলাদেশ। সহজ পথ শেষে কঠিন হয়ে গেলেও লিটন দাস ও শেখ মেহেদী হাসানের অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে জয়ের বন্দরে পৌঁছায় টিম টাইগার্স।
মাঝারি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রনি তালুকদারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ রানে দুই অঙ্ক ছুঁয়ে (১০) অ্যাডাম মিলনের বলে আউট হন এ ওপেনার। অধিনায়ক শান্ত নেমে ভালোই শুরু করেছিলেন। বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। ১৪ বলে ৪টি চারে ১৯ রান করে ফেরেন জিমি নিশামকে উইকেট দিয়ে।
লিটন দাসের সঙ্গী হন সৌম্য সরকার। ১ বছর পর টি-টুয়েন্টি দলে ফেরা বাঁহাতি ব্যাটার মিড উইকেট দিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে ইঙ্গিত দেন দারুণ কিছুর। তার ইনিংসও লম্বা হয়নি। বেন সিয়ার্সের বলে বোল্ড হন ইনিংসের নবম ওভারে। বাংলাদেশের সংগ্রহ তখন ৬৭ রান। সৌম্য ১৫ বলে ২২ রান করে যান।
লিটন দাস বাকি পথ পাড়ির চেষ্টা চালান তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে। এ মিডলঅর্ডার ব্যাটার আউট হন দলীয় সংগ্রহ যখন একশর কাছে। ১৮ বলে একটি ছয়ে ১৯ রান করে ফেরেন মিচেল স্যান্টনারের বলে।
১ রান যোগ হতেই টিম সাউদির বলে ফেরেন আফিফ হোসেন। পরপর দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। পরের ওভারে লিটন দাস রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচেন। শেষপর্যন্ত লড়ে এনে দেন জয়। লিটন ৩৬ বলে ৪২ ও মেহেদী ১৬ বলে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন।
আগে দ্যুতিময় বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে ১৩৪ রানে আটকে রেখে জয়ের স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। ৫০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর জিমি নিশামের লড়াই স্বাগতিকদের নিয়ে যায় মাঝারি পুঁজিতে। নয়ত আরও অল্পতে বেধে রাখার সুযোগ এসেছিল কিউইদের।
খেলা শুরুর আগে থেকেই ম্যাকলিন পার্কের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় টস জিতে আগে বোলিং বেছে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পেস কন্ডিশনে শুরুতে স্পিনার এনে তিনি চমকে দেন কিউইদের। প্রথম ওভারে বাংলাদেশকে সাফল্যও এনে দেন শেখ মেহেদী হাসান।
অফস্পিনার চতুর্থ বলে টিম সেইফার্টকে (০) বোল্ড করেন। দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে শরিফুল ইসলাম ফেরান ফিন অ্যালেনকে (১)। পরের বলে গ্লেন ফিলিপসকে (০) এলবিডব্লিউ করে জাগান হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা।
শরিফুলের জোড়া আঘাতের পর ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বল হাতে নেন মেহেদী। আবারও পান সাফল্য। এবার শিকার হন ড্যারেল মিচেল। ১৫ বলে দুটি চারে ১৪ রান করে বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে।
লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন উইকেট পান নিজের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে। মার্ক চ্যাপম্যানকে (১৯) বাউন্ডারি লাইনে তানজিম সাকিবের ক্যাচ বানান। ৫০ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর মিচেল স্যান্টনার ও নিশাম জুটি গড়ে দলকে নিয়ে যান একশর কাছে।
স্যান্টনারকে (২৩) সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানিয়ে ৪১ রানের সেই জুটি ভাঙেন শরিফুল। তৃতীয় শিকারের দেখা পান বাঁহাতি টাইগার পেসার।
নিজের শেষ ওভারের পঞ্চম বলে আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন শরিফুল। টিম সাউদি ৩০ গজ বৃত্তের মধ্যে ক্যাচ তুললেও রনি তালুকদার ও রিশাদ হোসেনর মাঝে ভুল বোঝাবুঝিতে শেষপর্যন্ত বল ধরার চেষ্টা করেননি কেউই।
শেষ দিকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা নিশামকে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দেন মোস্তাফিজ। ২৯ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছয়ে ৪৮ রান করে ফেরেন কিউই ব্যাটার।
টি-টুয়েন্টি অভিষেকে নিজের শেষ ওভারে উইকেট পান তানজিম সাকিব। সবচেয়ে খরুচে ছিলেন তরুণ পেসারই। ৪ ওভারে দেন ৪৫ রান। শেখ মেহেদী ৪ ওভারে ১২ রানে ২ উইকেট নেন। শরিফুল ৪ ওভারে ২৬ রানে ৩টি ও মোস্তাফিজ ৪ ওভারে ১৫ রানে নেন ২ উইকেট।
