জলবায়ু পরিবর্তনের দায়ে অন্য দেশের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে : আইসিজে


জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে এখন থেকে মামলা করতে পারবে, এমন যুগান্তকারী মতামত দিয়েছে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ‘আন্তর্জাতিক বিচার আদালত’ (আইসিজে)। যদিও এই মতামত বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জলবায়ু ন্যায়ের ক্ষেত্রে এক বিশাল পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইসিজের মতে, কোনো দেশ যদি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাযথ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে তা প্যারিস চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। বিচারক ইওয়াসাওয়া ইউজি বলেন, এই মতামত শুধু প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশ নয়, বরং বৈশ্বিকভাবে সকল দেশের জন্য প্রযোজ্য।
এই ঐতিহাসিক প্রক্রিয়ার সূচনা হয় ২০১৯ সালে, যখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর একদল আইন শিক্ষার্থী এই মামলার প্রস্তাবনা দেন। তাদের একজন, টোঙ্গার সিওসিউয়া ভেইকুন বলেন, এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা এখন গর্বের সঙ্গে আমাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে যেতে পারি।
ভানুয়াতুর শিক্ষার্থী ফ্লোরা ভানো বলেন, আজ রাতে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারব। এটি আমাদের কষ্ট, লড়াই ও ভবিষ্যতের স্বীকৃতি।
আইনজীবীরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত জাতীয় আদালতগুলোতেও প্রভাব ফেলবে এবং জলবায়ু ক্ষতিপূরণ আদায়ে নতুন দরজা খুলবে। বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোর বিরুদ্ধে, যারা জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়িয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য ঐতিহাসিকভাবে দায়ী।
যুক্তরাজ্যসহ কিছু উন্নত দেশ এই মামলার বিরুদ্ধে ছিল, তাদের যুক্তি ছিল, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিই যথেষ্ট। কিন্তু আদালত স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, বিদ্যমান চুক্তিগুলোর বাইরেও জলবায়ু রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা প্রতিটি দেশের বাধ্যবাধকতা।
আইসিজের পূর্ববর্তী উপদেশমূলক মতামত বাস্তবায়নের নজিরও রয়েছে। যেমন, চাগোস দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা প্রসঙ্গে আদালতের মতের ভিত্তিতেই যুক্তরাজ্য পরে মরিশাসের কাছে দ্বীপটি হস্তান্তরে সম্মত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এটি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, বিশেষ করে দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য।
