মওলানা ভাসানীর আওয়ামী লীগ ত্যাগ


০১. স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, মুক্তিযুদ্ধকালিন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান, আফ্রো-এশিয়া-লাতিন আমেরিকার নির্যাতিত-নিপিড়িত মানুষের মুক্তি সংগ্রামে কন্ঠস্বর মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ গঠিত হয় ১৯৫৭ সালের ২৬ জুলাই। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ ত্যা করেই তিনি ন্যাপ গঠন করেছিলেন। ২০২৫ সালে ২৬ জুলাই সেই ন্যাপ'র ৬৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী।
১৯৫৭ সালের ৬-১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে টাঙ্গাইলের কাগমারিতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে, দলের ডানপন্থী নেতারা সোহরাওয়ার্দীর সাথে একমত পোষণ করেন, কিন্তু ভাসানী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনার পক্ষে ছিলেন।
এই মতভেদের কারণে, ভাসানী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। ন্যাপ মূলত বাম বা ডান নয়, মধ্যপন্থী এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল ন্যাপ।
০২. আওয়ামী মুসলিম লীগ তৈকে আওয়ামী লীগ
ঢাকার স্বামীবাগে কে এস দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়। তবে দলটির জন্মসূত্রের সঙ্গে পুরনো ঢাকার ১৫০ নম্বর মোগলটুলিতে শওকত আলীর বাসভবনের সম্পর্ক ছিল অবিচ্ছেদ্য। উপমহাদেশ বিভক্তির আগে ঢাকার ১৫০ মোগলটুলিতে স্থাপিত হয়েছিল ‘ওয়ার্কার্স ক্যাম্প' ও মুসলিম লীগ পার্টি হাউস। কলকাতা থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী একটি মামলা পরিচালনার জন্য ঢাকায় এলে তিনি শওকত আলীকে মুসলিম লীগ ছেড়ে ভিন্ন একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পূর্ববঙ্গ কর্মীশিবিরের নেতাদের নিয়ে নতুন সংগঠন গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। ১৫০ নম্বর মোগলটুলির শওকত আলীর বাসভবন ও কর্মীশিবির অফিসকে ঘিরে কয়েকমাসের প্রস্তুতিমূলক তৎপরতার পর রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছিল। ওই সময় দলের স্থায়ী কোনও কার্যালয় না থাকায় ১৫০ মোগলটুলিকেই অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ছাত্রলীগের গোড়াপত্তনও হয়েছে মোগলটুলির এই ঠিকানায়। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার ৬ বছরের মাথায় ১৯৫৫ সালের সম্মেলনে অসাম্প্রদায়িক রূপ দিতে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে দলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি, শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মুজিবর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আহমদকে যুগ্ম সম্পাদক করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। ‘আওয়ামী লীগ: উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০’ বইয়ে লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন দলটি গঠনের পেছনের কথা। তিনি বলছেন, ‘১৯৪৮ সালে পাকিস্তান হওয়ার পরে ঢাকায় মুসলিম লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন মাওলানা আকরাম খান এবং খাজা নাজিমুদ্দিন। সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশেম নেতৃত্বাধীন বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের অনুসারী যে প্রোগ্রেসিভ [উদারপন্থী) নেতারা ছিলেন, তারা তখন সেখানে নিজেদের অবহেলিত মনে করছিলেন। তখন তারা মোগলটুলিতে ১৫০ নম্বর বাড়িতে একটি কর্মী শিবির স্থাপন করেছিলেন। সেখানে তারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার কথা চিন্তা করছিলেন। কলকাতা থেকে এসে শেখ মুজিবুর রহমান তাদের সঙ্গে যুক্ত হন। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার কারিগর মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী অথচ শেখ মুজিবুর রহমান থেকে শুরু করে তার কন্যা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এই চরম বাস্তবতা কখনো স্বীকার করেন নাই
০৩. আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাপ গঠন :
১৯৫৭ সালের ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারিতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। অধিবেশনে আওয়ামী লীগ সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান
