মিটফোর্ডে নির্মম হত্যাকাণ্ড: সোহাগের কবরের পাশে স্ত্রীর আহাজারি


“সবাই শুধু চেয়ে দেখল, একটা মানুষকে কিভাবে মেরে ফেলা হলো, কেউ এগিয়ে এল না। এমন কি করে হয়?” স্বামীর কবরের পাশে লুটিয়ে পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন লাকী বেগম। বেদনায় ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বারবার উচ্চারণ করছিলেন, সন্তানদের নিয়ে কীভাবে বাঁচব? কীভাবে চলবে এই জীবন?
কান্নার সেই মুহূর্তে পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সোহাগের দুই সন্তান, ১৪ বছরের সোহানা ও ১১ বছরের সোহান। চোখে জল, মুখে একটাই প্রশ্ন, আমাদের বাবাকে পাথর দিয়ে মেরে ফেলেছে। যারা এই কাজ করেছে, তাদের কঠিন শাস্তি চাই।
৯ জুলাই এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায়। প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়। মারধরের পর তার মরদেহের ওপর উল্লাসে নৃত্য করে খুনিরা, যা ভিডিও হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এই দৃশ্য স্তব্ধ করে দেয় গোটা জাতিকে।
বরগুনার ইসলামপুর গ্রামে শুক্রবার সকালে সোহাগের দাফন সম্পন্ন হয়। বহু বছর ধরে ঢাকায় ভাঙারির ব্যবসায় জড়িত ছিলেন তিনি। শুরুতে অন্যের অধীনে কাজ করলেও গত পাঁচ বছর ধরে নিজেই ব্যবসা চালাতেন।
শনিবার (১২ জুলাই) সোহাগের বাড়িতে কথা হয় স্ত্রী লাকী বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতি মাসে মাহিনসহ কয়েকজন দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করত। সোহাগ দিতে অস্বীকৃতি জানালে মোবাইলে ডেকে নিয়ে দোকানে মারধর করে, এরপর রাস্তায় এনে পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে মেরে ফেলে। শেষে ওর পরনের জামা কাপড় ছিঁড়ে শুধু অন্তর্বাসে ফেলে দেয় মরদেহ।
লাকীর অভিযোগ, থানায় মামলা দায়ের করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। একাধিকবার ডেকে এনে অভিযোগের ভাষা বদলাতে বাধ্য করা হয় বলে জানান তিনি। এমনকি ময়নাতদন্তের পর মরদেহ হস্তান্তরেও সময়ক্ষেপণ করা হয়।
সোহাগের বোন ফাতেমা বেগম ভাইয়ের কবরের পাশে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ভাইটা ছিল আমাদের পরিবারের ভরসা। সে সবসময় অন্যের উপকার করত। ওদের এই বর্বরতা আমি কল্পনাও করতে পারছি না।
পরিবারের দাবি, হত্যাকারী মাহিন ছিল সোহাগের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসঙ্গে সময় কাটানো, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি মাহিনের আর্থিক খরচও চালাতেন সোহাগ। সেই বন্ধুত্ব থেকেই বিশ্বাসঘাতকতা আর নির্মম হত্যাকাণ্ড কেউই মেনে নিতে পারছে না।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বরগুনা শহরে শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে মানববন্ধনে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রেস ক্লাব, সাংবাদিক ফোরাম, রাজনৈতিক সংগঠন ও সাধারণ জনগণ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে দাবি তোলেন, খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
দেশজুড়ে মানুষের একটাই আকুতি, আর যেন কোনো সোহাগ এভাবে নিষ্ঠুরতার শিকার না হন। সমাজ যেন আর নীরব না থেকে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে, যেন ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়।
