বিয়ের আগে কোন কোন মেডিকেল টেস্ট করা উচিত?


বিয়ে জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। দুজন মানুষ শুধু সামাজিকভাবে নয়, শারীরিকভাবেও কাছাকাছি আসেন। তাই বিয়ের আগে হবু জীবনসঙ্গীর স্বাস্থ্য পরিস্থিতি জানা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বের অনেক দেশে এ নিয়ে সচেতনতা থাকলেও আমাদের দেশে এখনও তা তেমন গড়ে ওঠেনি। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিয়ের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা দু’জনেরই করানো উচিত। আসুন জেনে নিই সেই পরীক্ষাগুলো কী কী।
১. রক্তের গ্রুপ ও আরএইচ ফ্যাক্টর পরীক্ষা
বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর রক্তের গ্রুপ জানা খুবই জরুরি। বিশেষ করে আরএইচ পজেটিভ বা নেগেটিভ বিষয়টি না জানলে ভবিষ্যতে সন্তানের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে স্ত্রী নেগেটিভ এবং স্বামী যদি পজেটিভ গ্রুপের হলে সন্তান হতে পারে নেগেটিভ বা পজেটিভ রক্তের গ্রুপের। সন্তান নেগেটিভ গ্রুপের হলে সমস্যা নেই, তবে পজেটিভ হলেই বিপদ। যদিও এক্ষেত্রে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা কম। সন্তান প্রসবের সময় সন্তানের রক্ত মায়ের শরীরে প্রবেশ করে বিভিন্নভাবে। ফলে মায়ের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। এ এন্টিবডি মায়ের শরীরে বাসা বাঁধে। পরবর্তীতে আরেকটি সন্তান যদি পজেটিভ গ্রুপের হয় তবে সেই এন্টিবডিপ্লাসেন্টার মাধ্যমে ভ্রুণে প্রবেশ করে তার রক্তকণিকাগুলো ধ্বংস করে ফেলে। তখন গর্ভস্থ শিশু গর্ভেই মারা যেতে পারে। কিংবা জন্মের পর মারাত্মক জন্ডিস, মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিন। স্ত্রীর নেগেটিভ ও স্বামীর রক্তের গ্রুপ পজেটিভ হলেও ভয়ের কিছু নেই। এমনটি হলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর তার রক্ত পরীক্ষা করান। সন্তান পজেটিভ হলে মায়ের শরীরে এন্টি-ডি ইনজেকশন দিয়ে নিতে হবে, অবশ্যই তা চিকিৎসকের পরামর্শে।
২. মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে দাম্পত্য জীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই হবু বর বা কনের কোনো মানসিক রোগ আছে কি না তা জেনে নেওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কেউ আগে মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকলেও তা জানিয়ে দেওয়া উচিত।
৩. এইডস ও যৌনবাহিত রোগ পরীক্ষা
এইডস ছাড়াও সিফিলিস, হেপাটাইটিস বি ও সি, গনোরিয়ার মতো যৌনবাহিত রোগ একে অপরের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। তাই বিয়ের আগে দুজনেরই এসব রোগের পরীক্ষা করানো নিরাপদ।
৪. বন্ধ্যাত্ব সংক্রান্ত পরীক্ষা
নারী বা পুরুষ যে কারও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা থাকতে পারে। পুরুষের ক্ষেত্রে সিমেন বিশ্লেষণ, আর নারীর ক্ষেত্রে হরমোন পরীক্ষা (এফএসএইচ, এলএইচ, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন, প্রোল্যাকটিন) এবং পেলভিক আলট্রাসনোগ্রাম করানো ভালো।
৫. ওভারি পরীক্ষা (নারীর ক্ষেত্রে)
বর্তমানে অনেক নারী উচ্চ বয়সে বিয়ে করেন। জীবনযাত্রার প্রভাবে ওভারিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা সন্তান ধারণে জটিলতা তৈরি করে। তাই বিয়ের আগে ওভারি পরীক্ষা করানো উচিত।
৬. জেনেটিক বা বংশগত রোগ পরীক্ষা
হবু বর-কনের বংশগত বা জেনেটিক রোগ আছে কি না তা জানা গেলে ভবিষ্যতের ঝুঁকি এড়ানো যায়। তাই জেনেটিক পরীক্ষা করানো জরুরি।
৭. থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা
থ্যালাসেমিয়া একটি গুরুতর বংশগত রোগ। বর-কনে দুজনই থ্যালাসেমিয়া বাহক হলে সন্তান গুরুতর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বিয়ের আগে এ পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি।
৮. রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) পরীক্ষা
বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে রক্তস্বল্পতা থাকলে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মের সময় জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই রক্তস্বল্পতা আছে কি না তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।
সুস্থ দাম্পত্য জীবনের জন্য আগে থেকেই সচেতন হওয়া জরুরি। বিয়ের আগে এসব পরীক্ষা দুজনেরই স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
দৈএনকে/জে .আ
