ঘরে ঘরে জ্বর-ব্যথা: বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, আতঙ্কে জনজীবন


রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ করে জ্বর, প্রচণ্ড শরীরব্যথা এবং দুর্বলতা নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন হাজারো মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একই সময়ে করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো ভাইরাসজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।
উপসর্গ: হালকা থেকে শুরু, ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে: ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, শুরুতে জ্বর ও মাথাব্যথা থাকলেও একদিন পরেই তা ভয়াবহ শরীরব্যথা, হাড়ে ব্যথা, দুর্বলতা এবং কিছু ক্ষেত্রে বমিভাব বা র্যাশের মতো উপসর্গে রূপ নিচ্ছে। অনেকেই এক সপ্তাহ পর্যন্ত চলাফেরা করতে পারছেন না।
রাজধানীর মহাখালীর বাসিন্দা আইরিন হোসেন বলেন, “প্রথমে মনে হয়েছিল সাধারণ জ্বর, কিন্তু পরে হাত-পা ভেঙে যাচ্ছে এমন ব্যথা শুরু হলো। দুই সন্তানসহ পরিবারের চারজনই একই অসুস্থতায় আক্রান্ত।”
এ রোগ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শিশু ও বৃদ্ধরাও। তেজগাঁও এলাকার বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, “আমার ৭০ বছরের মাকে তিনদিন ধরে জ্বর, হাঁটতে পারছেন না। ডাক্তার বলেছে ‘ভাইরাল ফিভার’। কিন্তু ওষুধে কাজ হচ্ছে না।”
ঢাকার তেজগাঁও এলাকার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, “বিদ্যালয়ে শতাধিক শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করছি। সবাই এক ধরনের জ্বর ও দুর্বলতায় ভুগছে।”
বিশেষজ্ঞের মতামত: একই সঙ্গে করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “বর্তমানে তিন ধরনের ভাইরাল রোগ একসাথে ছড়াচ্ছে—করোনা, ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া। উপসর্গগুলো অনেকাংশে এক, তাই সঠিক নির্ণয় জরুরি। শুধু প্যারাসিটামল নয়, প্রয়োজন হলে রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে জ্বরের পাশাপাশি রক্তের প্লেটলেটও কমে যেতে পারে। তাই জ্বরকে হালকাভাবে না নিয়ে পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।”
সাধারণ মানুষের অভিযোগ: চিকিৎসা ও পরীক্ষা ব্যয়বহুল- অনেকেই অভিযোগ করছেন, প্রাইভেট হাসপাতালে বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার খরচ এবং ওষুধের দাম অনেক বেশি। নোয়াখালীর একজন দিনমজুর বলেন, “একটা রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়েছিলাম, ১২শ টাকা চেয়েছে। আমার পক্ষে এই খরচ চালানো সম্ভব না।”
প্রতিকার ও করণীয়: সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি: বিশেষজ্ঞরা কিছু প্রাথমিক প্রতিকারের পরামর্শ দিয়েছেন: যেমন, প্রচুর পানি পান করতে হবে, বিশ্রাম নিতে হবে এবং ঘাম হলে শুকনো কাপড়ে মুছে ফেলতে হবে, প্যারাসিটামল সেবন করা যেতে পারে জ্বর বেশি হলে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক নয়, ডেঙ্গুর শঙ্কা থাকলে রক্ত পরীক্ষা করা আবশ্যক, ঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে, মশার কামড় এড়াতে মশারি ব্যবহার করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কতা জারি: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এই সময়ে সকল নাগরিককে অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলতে, মাস্ক পরতে এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষ মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
এন কে/বিএইচ
