বেঙ্গালুরুর শিরোপা স্বপ্ন পূরণ, পাঞ্জাবকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন কোহলির দল


১৮ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা, প্রতিটি মৌসুমের ব্যর্থতার যন্ত্রণা, প্রতিটি পরাজয়ের পরও মাঠভরা গর্জনে সমর্থন জানানো লক্ষ কোটি ভক্ত—সব কিছুর উত্তর যেন মঙ্গলবার রাতে মিলে গেল।
রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, এক সময়ের ‘চির-প্রতিশ্রুতিশীল’ দল, এবার আর শুধুই অংশগ্রহণ করতে আসেনি—তারা এসেছিল ইতিহাস লিখতে। নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে আইপিএলের শিরোপা জয় করলো তারা, প্রথমবারের মতো। এই জয় কেবল একটি ম্যাচের ফল নয়—এটা এক প্রজন্মের অপেক্ষার অবসান, এক ভালোবাসার জয়।
তবে, এই পুরো যাত্রার কেন্দ্রবিন্দুতে যিনি ছিলেন, যিনি বারবার দলকে উজ্জীবিত করেছেন, তিনি একজনই—বিরাট কোহলি। ট্রফিটা কোহলির হাতেই যেন সবচেয়ে মানানসই লাগছিল। কারণ এটি শুধু তার হাতে নয়, তার চোখের জল, তার প্রতিজ্ঞা, এবং তার অধরা স্বপ্নে লেখা ছিল বহু আগেই।
বিরাট কোহলি—একজন ক্রিকেটার যার ক্যারিয়ার সাফল্যে পূর্ণ। বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, টি-২০ বিশ্বকাপ—সবই রয়েছে তার ট্রফিকেসে। তবুও একটা শূন্যতা ছিল, যেটা শুধু তিনিই অনুভব করতেন—আইপিএলের শিরোপা।
১৭ বছর ধরে রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে খেলেছেন, তিনবার নিয়ে গেছেন দলকে ফাইনালে, কিন্তু প্রতিবারই ফিরে এসেছেন খালি হাতে। সেই অপূর্ণতা যেন হয়ে উঠেছিল এক ব্যক্তিগত যন্ত্রণার নাম।
অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটল। বুধবার রাতে, এক নাটকীয় লড়াইয়ে পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে, আইপিএলের প্রথম শিরোপা জয় করলো বেঙ্গালুরু। আর সেই জয়ের মুহূর্তে বিরাট কোহলির চোখে যা ছিল—তা শুধুই আনন্দ নয়, ছিল তৃপ্তি, ছিল বিস্ময় আর ছিল বহু বছরের লালিত এক স্বপ্ন পূরণের নিঃশব্দ চিৎকার।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত রোমাঞ্চকর ফাইনালে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দৃঢ়তা দেখায় বিরাট কোহলির বেঙ্গালুরু। নির্ধারিত ২০ ওভারে দলটি তোলে ৯ উইকেটে ১৯০ রান।
বিরাট কোহলি নিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন—৩৫ বলে সর্বোচ্চ ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। তার পাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন রজত পতিদার (১৬ বলে ২৬), মায়াঙ্ক আগারওয়াল (১৮ বলে ২৪), লিয়াম লিভিংস্টোন (১৫ বলে ২৫), জিতেশ শর্মা (১০ বলে ঝড়ো ২৪) এবং রোমারিও শেইফার্ড (৯ বলে ১৭)। প্রত্যেকেই ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান প্রয়োজনমতো ঝড় তোলার মধ্য দিয়ে।
জবাবে পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটিংও শুরু হয় প্রতিশ্রুতিশীলভাবে। কিন্তু তারা পুরোটা পথ ধরে রাখতে পারেনি। টপ অর্ডারের ব্যাটাররা শুরুটা ভালো করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। প্রিয়াংশি আরিয়া করেন ২৪ রান (১৯ বল), প্রবসিমরান সিং ২৬ (২২ বল) এবং জস ইংলিশ ৩৯ (২৩ বল)। কিন্তু এই ধারাবাহিকতাহীনতা শেষ পর্যন্ত বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তবে একপ্রান্তে লড়াই চালিয়ে যান শশাঙ্ক সিং—তার ব্যাটে আসে ৩১ বলে ঝড়ো ৬১ রান, যার মধ্যে ছিল ছয়টি ছক্কা ও তিনটি চারের মার। কিন্তু অপরপ্রান্তে নামান ওধেরা ব্যর্থ হন। তিনি ১৮ বল খেলেও করেন মাত্র ১৫ রান, যা চাপ আরও বাড়িয়ে দেয় পাঞ্জাবের ওপর। শেষ পর্যন্ত তারা থেমে যায় ১৮৪ রানে, হার মানে মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে।
পাঞ্জাবের জন্য এটি দ্বিতীয় আইপিএল ফাইনাল। ১১ বছর আগে, ২০১৪ সালেও তারা শিরোপার দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছিল। আবারও প্রীতি জিনতার দলকে দেখতে হলো ভাঙা স্বপ্নের ছবি।
অন্যদিকে, রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এই জয় শুধুই একটি ট্রফি জেতা নয়—এটি ইতিহাস লেখা। এটি বিরাট কোহলির চোখেমুখে অশ্রুর মতো জমে থাকা অপেক্ষার প্রতিফলন। আর সেই উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী, আরসিবি-র আরেক কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্স—যার উপস্থিতি মুহূর্তটিকে করে তুলেছিল আরও আবেগময় ও স্মরণীয়।
