শিরোপার অপেক্ষা ফুরাবে কার? বেঙ্গালুরু নাকি পাঞ্জাব


মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস আগে শ্রেয়াস আইয়ার ও রাজাত পাতিদার মুখোমুখি হয়েছিলেন একটি টি-টোয়েন্টি ফাইনালে। বেঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফির সেই ফাইনালে মধ্যপ্রদেশের হয়ে রাজাত পাতিদার খেলেছিলেন দুর্দান্ত ৮১ রানের ইনিংস মাত্র ৪০ বলে। যদিও তার ইনিংসটি জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। শ্রেয়াস আইয়ার ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে না পারলেও, তার নেতৃত্বে মুম্বাই জিতে নিয়েছিল শিরোপা।
এবার আরেকটি বড় ফাইনালের আগে, আইপিএল শিরোপা লড়াইয়ের প্রাক্কালে, পুরোনো সেই স্মৃতি ফিরে দেখলেন পাতিদার। তিনি বলেন, “শ্রেয়াসকে একটু আগেই বলছিলাম—সবকিছুই যেন একইরকম লাগছে। দুই দলের অধিনায়কও আগের মতোই, আবার ফাইনাল... পার্থক্য শুধু এটুকুই—এবার মঞ্চটা আইপিএল।”
ফাইনালের আগে দুই ক্রিকেটারের এই পরিচিত লড়াই নতুন করে উত্তেজনা যোগ করছে আইপিএলের শিরোপা লড়াইয়ে।
মাত্র কয়েক মাস আগে ঘরোয়া ক্রিকেটের একটি ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজাত পাতিদার ও শ্রেয়াস আইয়ার। সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফির সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে উজ্জ্বল ছিলেন পাতিদার, আর জয় এসেছিল শ্রেয়াসের নেতৃত্বে। এবার একইরকম এক মঞ্চে, তবে আরও অনেক বড় পরিসরে—আইপিএলের ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তারা। ম্যাচের আগের দিন পাতিদার বলেছিলেন, “শ্রেয়াসকেও বলেছি, সব কিছু যেন আগের মতোই লাগছে। শুধু পার্থক্য একটাই—এটা আইপিএল।”
আর এই পার্থক্যই আকাশ-পাতাল। সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফি ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ঘরোয়া আসর হলেও আইপিএল শুধু একটি টুর্নামেন্ট নয়—এটা এখন ভারতের ক্রিকেট সংস্কৃতিরই অংশ, গর্ব, আবেগ ও স্বপ্নের এক অনন্য প্রকাশ।
এই বিশাল মঞ্চে এবার শিরোপার একেবারে দোরগোড়ায় রয়েছে দুটি দল—রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও পাঞ্জাব কিংস। দু'দলই আইপিএলের প্রথম আসর থেকেই অংশ নিচ্ছে, তবে এখনও কোনোবারই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পায়নি। এবার ইতিহাস বদলানোর সুবর্ণ সুযোগ তাদের সামনে।
ফাইনাল ম্যাচটি হবে মঙ্গলবার (৪ জুন) রাতে, আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। রাত ৮টায় শুরু হবে ম্যাচ, যেটি ঘিরে টানটান উত্তেজনা ছড়িয়েছে ক্রিকেট বিশ্বে।
দুটি দলেরই রয়েছে দীর্ঘদিনের অপেক্ষা আর হতাশার ইতিহাস। বেঙ্গালুরু তিনবার খেলেছে ফাইনালে, জিততে পারেনি একবারও। কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্স, গেইল, ক্যালিস, স্টেইনদের মতো কিংবদন্তিরা মাঠ মাতালেও শিরোপা অধরাই রয়ে গেছে। অন্যদিকে, পাঞ্জাব একবারই উঠেছিল ফাইনালে—২০১৪ সালে। তখনও তারা হেরে ফিরেছিল।
আইপিএলে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে শিরোপাবিহীন থাকা দল তিনটি—বেঙ্গালুরু, পাঞ্জাব ও দিল্লি ক্যাপিটালস। এই 'ট্রায়ো'কে মজা করে বলা হয় ‘হোলি ট্রিনিটি’। এবার ট্রিনিটির একজন তো নিশ্চিতভাবেই এই তালিকা থেকে বাদ পড়বে।
বেঙ্গালুরুর হয়ে এবারের ফাইনাল ঘিরে সবচেয়ে বড় আবেগের নাম অবশ্যই ভিরাট কোহলি। ব্যাট হাতে রেকর্ড গড়েই চলেছেন তিনি—এবারও ৫০০ রান পেরিয়েছেন অষ্টমবারের মতো। ১৮ নম্বর জার্সি পরা এই মহাতারকার কি ১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারবেন?
বেঙ্গালুরুর ব্যাটিং বরাবরই শক্তিশালী, তবে এবার তাদের বোলিং আক্রমণও দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ। হেইজেলউড, ইয়াশ দায়াল, সুয়াশ শর্মারা পুরো আসরজুড়ে নজর কেড়েছেন। প্রথম কোয়ালিফায়ারে পাঞ্জাবকে মাত্র ১০১ রানে থামিয়ে দিয়েছিল এই বোলিং ইউনিট।
তবে পাঞ্জাব দলটাও এবার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি পরিপক্ব ও লড়াকু। কোচ হিসেবে আছেন রিকি পন্টিং, আর অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার। মাঠ ও মাঠের বাইরে দলকে গড়েছেন একটি পরিবারের মতো। দলে আছে অভিজ্ঞতার সঙ্গে তরুণদের দুর্দান্ত সংমিশ্রণ—প্রিয়ানশ আরিয়া, প্রাভসিমরান সিং, নেহাল ওয়াধেরার মতো তরুণরা পারফরম্যান্সে অবদান রেখেছেন, অভিজ্ঞ শশাঙ্ক, স্টয়নিস, আর্শদিপরাও ছিলেন কার্যকর।
পাঞ্জাবের নেতৃত্বে শ্রেয়াস আইয়ার এবার তৈরি করেছেন এক অনন্য রেকর্ড—তিনটি ভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ফাইনালে তুলেছেন। এবার যদি শিরোপা জয় হয়, তবে সেটি হবে তার নেতৃত্বগুণের এক অসাধারণ স্বীকৃতি।
