ঢাকার ব্যস্ত জীবনে হারিয়ে যাওয়া ‘নিজস্ব সময়’


একসময় মানুষ সন্ধ্যার পর চায়ের কাপ হাতে বারান্দায় বসে নিরিবিলিতে সময় কাটাতো। পাড়ার আড্ডা, আত্মীয়দের বাড়ি যাওয়া, বিকেলে হাঁটতে যাওয়া ছিল স্বাভাবিক অভ্যাস। এখন সন্ধ্যা মানেই জ্যামে আটকে থাকা, মোবাইলে স্ক্রল করা কিংবা ক্লান্ত হয়ে সোফায় গা এলিয়ে দেওয়া। সময় যেন আছে, কিন্তু নিজের জন্য নেই।
যান্ত্রিক জীবনের চক্রে বন্দি
ঢাকা শহর যেন সময়কে গিলে ফেলে। একদিকে অফিসের চাপ, অন্যদিকে পরিবার, সন্তান, দায়িত্ব। দিনের ২৪ ঘণ্টা যেন কোথাও উবে যায়। সকাল ৬টায় ঘুম ভাঙা, অফিসে দৌড়, ফেরার পথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকা — এর মাঝে কোথায় যেন হারিয়ে যায় ‘আমি’ নামের মানুষটা।
অফিস থেকে ফেরা ফারহানা সুলতানা বললেন, “দিনের সব কাজ অন্যের জন্য। পরিবার, বস, কলিগ – সবাই কিছু না কিছু চায়। কিন্তু নিজের জন্য সময় রাখি কখন?”
'নিজের সময়' মানে কী?
‘নিজের সময়’ মানে শুধুই অলস থাকা নয়। এটি মানে নিজের সঙ্গে নিজের সময় কাটানো, শখের চর্চা করা, বই পড়া, হাঁটাহাঁটি, সঙ্গীত শোনা কিংবা শুধু নিঃশব্দে বসে থাকা। এটি মানসিক প্রশান্তি ও সুস্থতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, নিয়মিত ‘নিজের সময়’ কাটাতে না পারলে মানসিক চাপ, উদ্বেগ, একাকীত্ব এবং সম্পর্কের টানাপড়েন বেড়ে যেতে পারে।
বিশ্রাম নয়, পুনর্জাগরণ
নিজের জন্য সময় বের করা মানে শুধু বিশ্রাম নয়, এটা এক ধরনের আত্ম-চর্চা। নিজের ভাবনা, ইচ্ছা, স্বপ্নগুলোর সঙ্গে সংযোগ রাখা। এটি আত্মবিশ্বাস ও জীবনের প্রতি ভালোবাসা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
একজন কর্পোরেট পেশাজীবী জানালেন, “শুধু উইকএন্ড নয়, আমি প্রতিদিন সকালে ৩০ মিনিট নিজের জন্য রাখি। ফোন অফ রাখি, গান শুনি বা ডায়েরি লিখি। এই ছোট সময়টাই আমাকে সারা দিনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে।”
কীভাবে সম্ভব ‘নিজস্ব সময়’ বের করা?
১. ডিজিটাল ডিটক্স: প্রতিদিন অন্তত কিছু সময় ফোন ও সামাজিক মাধ্যম থেকে বিরতি নিন।
২. ছোট করে হলেও শখ চর্চা করুন: গান, বই, আঁকা, লেখালেখি যা ভালো লাগে।
৩. সময়ের পরিকল্পনা করুন: অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় অপচয় না করে নিজের জন্য নির্ধারিত সময় রাখুন।
৪. না বলা শিখুন: সবকিছুতেই হ্যাঁ বললে নিজের জন্য সময় বাঁচে না।
শেষ কথা
এই শহরের গতি থামবে না। কিন্তু এই গতি সামলাতে গিয়ে যদি আমরা নিজেকেই হারিয়ে ফেলি, তবে সব অর্জনের মাঝেও শূন্যতা থেকে যাবে। সময়ের মাঝে একটু থেমে নিজের দিকে তাকানো, নিজের কথা শোনা — এটুকুই কি আমাদের ন্যূনতম প্রাপ্য নয়?
