বুয়েটের আবরার ফাহাদকে হারানোর আজ ছয় বছর

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ (৬ অক্টোবর)। ২০১৯ সালের এই দিনে একটি ফেসবুক পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে নৃশংসভাবে খুন করা হয় মেধাবী এই ছাত্রকে।
সেদিন রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে দীর্ঘ সময় ধরে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) একদল নেতাকর্মী। পরদিন গভীর রাতে হলের সিঁড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
আবরার ফাহাদের এই হত্যাকাণ্ডে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও আন্দোলনের ঝড় ওঠে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, নাগরিক সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ তার হত্যার বিচার দাবি করে আন্দোলনে নামেন। ঘটনার পর বুয়েট প্রশাসন ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
পরবর্তীতে মামলার তদন্ত শেষে ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। আদালত রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে মামলাটি এখনো আপিল প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
আবরার ফাহাদকে স্মরণ করে আজ বুয়েট ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষক ও সহপাঠীরা শ্রদ্ধা নিবেদন ও আলোচনাসভা আয়োজন করেছেন। তার পরিবার বলছে, “আমরা শুধু রায় নয়, তার বাস্তবায়ন চাই—যেন ভবিষ্যতে আর কোনো আবরারকে হারাতে না হয়।”
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত ১৬ মার্চ মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বিচারিক আদালতের রায় বহাল রাখেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২০ জনের মধ্যে বিচারিক আদালতের রায়ের সময় থেকেই তিনজন পলাতক। তারা হলেন মোর্শেদ-উজ-জামান, এহতেশামুল রাব্বি ও মুজতবা রাফিদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক আসামি মুনতাসির আল (জেমি) গত বছরের ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যান। এ মামলায় সব মিলিয়ে দণ্ডিত ২৫ আসামির মধ্যে চারজন পলাতক বলে রায় ঘোষণার দিন (গত ১৬ মার্চ) জানিয়েছিল রাষ্ট্রপক্ষ।
এদিকে ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী ও ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর ম্যাসাকার দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রতিবছর এই দুটি দিবস বিশেষভাবে পালিত হবে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিকালে প্রধান উপদেষ্টার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, শহীদ আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে ৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকাসহ দেশের সব শিল্পকলা একাডেমিতে ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে। ঢাকার প্রদর্শনীতে উপস্থিত থাকবেন আবরার ফাহাদের বাবা।
এছাড়া আজ বিকেল ৩টায় আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাশী চত্বরে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় আগ্রাসনবিরোধী আট স্তম্ভ উদ্বোধন হবে। উদ্বোধন করবেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ।
২০২০ সালের ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের প্রথম শাহাদতবার্ষিকীতে ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে সর্বপ্রথম আট স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এতে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্দেশে তা ভেঙে ফেলা হয়। এ ছাড়া আট স্তম্ভ নির্মাণের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে আখতার হোসেন ছাত্রলীগের হামলা ও নির্যাতনের শিকার হন।
স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে লেখা ছিল ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা, অসীম মহাকাশের অন্তে’। আবরার ফাহাদ তার ফেসবুক প্রোফাইলেও ওই উক্তি ব্যবহার করেছিলেন।