ক্রীড়া উপদেষ্টার ভাষায় সাকিবের ফেরা—আশা না হতাশা?


বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবারও হতাশার ছায়া। মাঠের পারফরম্যান্স প্রশ্ন তুলছে দল নির্বাচনের উপর, আর প্রতিবারের মতোই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছেন সাকিব আল হাসান। লিটন দাস কিংবা তাওহীদ হৃদয়ের ব্যর্থতার পর ভক্তদের হতাশ গলায় প্রায়ই শোনা যায়—‘সাকিব থাকলে হয়তো ফলটা ভিন্ন হতে পারত!’
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হার আরও বাড়িয়ে দিয়েছে সেই আক্ষেপের মাত্রা। দলের অভিজ্ঞতার ঘাটতি ও নেতৃত্বহীনতার প্রশ্নে বারবার ফিরে আসে সাকিবের অনুপস্থিতির প্রসঙ্গ।
এমন প্রেক্ষাপটে, সাকিব আল হাসানকে জাতীয় দলে ফেরানো নিয়ে নতুন করে মুখ খুলেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। তবে তার বক্তব্যে আশার কোনো আলো দেখা যায়নি। বরং ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, সাকিবের প্রত্যাবর্তন নিয়ে বোর্ড এখনো দ্বিধায় রয়েছে—যা ভক্তদের হতাশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা সাকিব আল হাসানের জাতীয় দলে ফেরার বিষয়টি নিয়ে আবারও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্সে জাতীয় দলের কিছু খেলোয়াড়ের ব্যর্থতার পর সাকিবের অনুপস্থিতি নিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে জোর আলোচনা হলেও, বোর্ড ও প্রশাসনের বক্তব্যে মিল মিলছে না।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, "সাকিব বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার—এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে মাঠের বাইরের বিষয়—যেমন মামলা বা আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ—তাকে নিজেকেই মোকাবিলা করতে হবে।"
অন্যদিকে, সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, "সাকিব আমাদের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। আমরা চাই সে সুস্থ থাকুক এবং ভালো ক্রিকেট খেলুক। তবে নির্বাচনের বিষয়টি কেবল নির্বাচকদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে—এখানে ক্রীড়া উপদেষ্টার কোনো ভূমিকা নেই।"
এই দুই ভিন্নমুখী বক্তব্যে সাকিবের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে। কারণ স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে—আইনি জটিলতা না মিটলে সাকিবের জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ।
এদিকে, ক্রীড়া উপদেষ্টা আরেকটি বিষয় নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার অভিযোগ, "বিসিবির পরিচালকদের সঙ্গে যখনই আলোচনা হতো, তারা প্রায়শই ক্রিকেটের বাইরের বিষয়—যেমন ব্যবসা কিংবা ব্যক্তিগত তদবির—নিয়ে কথা তুলতেন। আমি তখনই স্পষ্ট করে দিই, এসব বিষয়ে যেন আমার সঙ্গে আলোচনা না করা হয়।"
অন্যদিকে, বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ এক সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কারা বোর্ডে থাকবেন বা সভাপতির পাশে থাকবেন, তা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল। সে কারণেই তিনি বাস্তবে স্বাধীনভাবে কিছু করতে পারেননি। এই বক্তব্যের সত্যতা আংশিকভাবে স্বীকার করে নিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা নিজেও। তিনি বলেন, "ফারুক আহমেদের প্রতি তখনো নির্দেশনা ছিল, যেন তিনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা না গড়েন।"
সবমিলিয়ে বোঝা যাচ্ছে, মাঠের খেলা যতটা আলোচিত, মাঠের বাইরের রাজনীতি ও প্রশাসনিক টানাপড়েনও ততটাই প্রভাব ফেলছে বাংলাদেশের ক্রিকেট কাঠামোয়—যার প্রত্যক্ষ শিকার হতে পারেন অভিজ্ঞ ও বিতর্কিত খেলোয়াড়রাও, যেমন সাকিব আল হাসান।
