রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
Natun Kagoj

চলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আপিল শুনানি, আজ ৭ম দিন

চলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আপিল শুনানি, আজ ৭ম দিন
ছবি: সংগৃহীত
গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন

বাংলাদেশের আপিল বিভাগে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) শুনানি শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ এই শুনানির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে আবেদনকারীরা আগের রায়ে থাকা বিষয়গুলো পুনঃবিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন। আদালত আগামী দিনগুলোতে শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো যাচাই ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবে।

আইনি বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি দেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মামলা, কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং প্রভাব বিচারকরা পুনঃবিবেচনা করবেন।

আদালতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস।

এর আগে ২১, ২২, ২৩, ২৮, ২৯ অক্টোবর এবং ২ নভেম্বর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ঐ শুনানিগুলোতে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে ড. শরীফ ভূঁইয়া, ইন্টারভেনার হিসেবে আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে শিশির মনির এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে এস এম শাহরিয়ার যুক্তি উপস্থাপন করেন।

এর আগে ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করার আবেদনগুলোর প্রাথমিক শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেয় আপিল বিভাগ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইনি পটভূমি

১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন হাইকোর্টে রিট করেন।

২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে রিট খারিজ করেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেওয়া হয়, যার ভিত্তিতে ২০০৫ সালে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়।

২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয় সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী, যেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়।

৩ জুলাই ২০১১ সালে সংশোধনীর গেজেট প্রকাশ করা হয়।
রিভিউ আবেদন ও আবেদনকারীরা

২০১১ সালের পর সরকার পরিবর্তনের পর ৫ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন।

অন্য চারজন আবেদনকারীরা হলেন তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।

এরপর ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। একই বছরের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং পরে নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও পৃথকভাবে আবেদন করেন।

বর্তমানে এসব রিভিউ আবেদন একত্রে শুনানি চলছে আপিল বিভাগে, যা দেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


গুগল নিউজে (Google News) নতুন কাগজ’র খবর পেতে ফলো করুন