বিশ্ব বাণিজ্যে ট্রাম্পের নীতি বদলের ইঙ্গিত


আবারও কড়া বাণিজ্য নীতির পথে ফিরছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তার নজরে ১৫০টিরও বেশি দেশ। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব দেশের কাছে খুব শিগগিরই একটি বার্তা পাঠানো হবে, যেখানে জানিয়ে দেওয়া হবে—তাদের পণ্যের ওপর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত অসংখ্য দেশ এখন উদ্বেগে, কারণ এই নতুন নীতির ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বাড়তে পারে রাজনৈতিক টানাপোড়েনও। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী বছরের আগে নিজ দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ট্রাম্প তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিলেন।
বুধবার (১৬ জুলাই) হোয়াইট হাউজে বাহরাইনের যুবরাজ সালমান বিন হামাদ আল খলিফার সঙ্গে বৈঠকের সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ১৫০টির বেশি দেশে পেমেন্ট নোটিশ পাঠাব। চিঠিতে লেখা থাকবে, তাদের পণ্যে কত শতাংশ শুল্ক বসবে। এদের অনেকেই ছোট দেশ, আমাদের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যও খুব কম।’
বর্তমানে এপ্রিল থেকে ট্রাম্প প্রশাসন একটি ১০ শতাংশ ‘বেসলাইন ট্যারিফ’ চালু করেছে, যা সবাইকে গুনতে হচ্ছে। যদিও এর হার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট, তবে বুধবার নির্দিষ্ট কোনো হার উল্লেখ করেননি।
ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ প্রায় দুই ডজন দেশকে আলাদা করে চিঠি পাঠানো হয়েছে, যেটি ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। এসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দরকষাকষি চলছে, যাতে তারা তুলনামূলক ভালো কোনো চুক্তি আদায় করতে পারে।
তবে শঙ্কা তৈরি হয়েছে- নতুন এই শুল্ক হার বাস্তবায়ন হলে তা মার্কিন অর্থনীতি ও বৈশ্বিক বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এতে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে এখনো চিঠি না পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে তাইওয়ান, সুইজারল্যান্ড ও ভারত যারা ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির ৩ শতাংশের বেশি অংশীদার ছিল।
আরও পড়ুন: চলতি বছর স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২৬ শতাংশ, সামনে রেকর্ড পরিমাণ বাড়ার আভাস
ভারতের বিষয়ে ট্রাম্প এদিন দ্ব্যর্থক বক্তব্য দেন। প্রথমে বলেন, ‘আমাদের সামনে হয়তো ভারতের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি আসছে।’ পরে আবার বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।’
জাপান প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘জাপানের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি, তবে সম্ভবত তাদের পাঠানো চিঠির শর্তেই চলতে হবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক নীতি বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। তবে ট্রাম্পের লক্ষ্য, আমেরিকার শিল্প ও উৎপাদন খাতকে আরও শক্তিশালী করা। এখন দেখার বিষয়, আগস্টের আগে কতগুলো দেশ ট্রাম্পের সঙ্গে সুবিধাজনক চুক্তি করতে পারে।
